শিরোনাম
নারায়ণগঞ্জ, ১৪ মে,২০২৫ (বাসস) : লাল-গোলাপি রসালো লিচু বাগানে বাগানে ঝুলছে।বাগান থেকে বাজারে আসছে টসটসে পাকা লিচু। খোসা ছাড়িয়ে মুখে দিয়েই লিচুপ্রেমীরা পাবেন অমৃত স্বাদ। ট্রাকভর্তি এই লিচু যাবে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। বলছি ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ঘেরা জেলার সোনারগাঁয়ের বিখ্যাত কদমি লিচুর কথা।
বৈশাখের শেষ সময়ে সোনারগাঁয়ের লিচু প্রথম বাজারে আসে। আগাম বাজারজাত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তুলনায় সোনারগাঁয়ের লিচুর চাহিদা থাকে অনেক বেশি। সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হিসেবে রসালো এই লিচু সারাদেশে বেশ পরিচিত। আগাম জাতের হওয়ায় বর্তমানের সারাদেশের ৫০ শতাংশের অধিক লিচুর চাহিদা পূরণ করছে এই অঞ্চলের লিচু বলে দাবি করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক। এছাড়াও স্থানীয় চাষিরা জানান, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে।
সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, সোনারগাঁয়ে এই বছর ৮৫টি গ্রামে ১০৭ হেক্টর জমিতে লিচুগাছ রয়েছে। বাগান আছে ২৮২ টি। ধারণা করা হচ্ছে এই বছর প্রায় ৭২০ মেট্রিক টন লিচু ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। যা থেকে প্রায় সাত কোটি টাকা বিক্রি হতে পারে ।
সোনারগাঁয়ে কদমি লিচুর পাশাপাশি , মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, এলাচি ও পাতি জাতের লিচু চাষ হয় । এই উপজেলার ৮৫টি গ্রাম লিচুর জন্য প্রসিদ্ধ। তবে সোনারগাঁ পৌরসভার গোয়ালদী, হরিষপুর, দুলালপুর, পানাম গাবতলী, খাসনগর দীঘিরপাড়, চিলারবাগ, ইছাপাড়া, দত্তপাড়া, হাতকোপা, অজুন্দী, বাগমুছা, গোবিন্দপুর, লাহাপাড়া, বালুয়াদীঘিরপাড় ও বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হাড়িয়া, হামছাদী, দামোদরদী, পঞ্চবটী, মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া ও গোহাট্টা এলাকায় সবচেয়ে বেশি উৎকৃষ্ট মানের লিচু চাষ হয়।
জনশ্রুতিতে জানা যায় , সোনারগাঁয়ের গাবতলী এলাকায় প্রায় দুইশত বছর আগে এক সাধু দুটি লিচু গাছ রোপণ করেছিলেন। সেই গাছের লিচুর স্বাদ এতটাই অমৃত ছিল যে এই ফলের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের এলাকায়। পরে এখান থেকেই এই লিচুর কলম করে রোপণ করা হয়। যা থেকে পুরো উপজেলায় এই লিচুর বিস্তার ঘটে। সাধুর গাছকে ঘিরে একটি এলাকার নাম হয়ে উঠে সাধুরবাগ।
সাধুরবাগ সহ উপজেলায় বিস্তৃত একাধিক লিচুর বাগান ঘুরে দেখা মিলে বাগানিরা লিচু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। কেউবা আবার লিচু বাগানে পাহারা দিচ্ছেন। বানর ও কাকের থেকে লিচু রক্ষায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। বাগানিদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্য সহযোগিতা করছেন। বাগানিরা গাছ থেকে লিচু ছিড়ে বাজারে বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করছেন। কেউ আবার রশি দিয়ে লিচু একসঙ্গে আঁটিবাঁধা ও প্যাকেটিং এর কাজে ব্যস্ত। উৎপাদন ভালো হওয়ায় উৎসব আমেজে পরিবার নিয়ে কাজ করছেন বাগানিরা।
গাবতলী এলাকায় লিচু ব্যবসায়ী আউয়াল মিয়া বলেন, "আমি আগামী ৩ বছরের জন্য তিনটা বাগান ইজারায় নিয়েছি। গাবতলী, ষোলপাড়া ও কৃষ্ণপুর এলাকায় আমি বাগান ইজারায় নিয়েছি। এখন পর্যন্ত লিচু বাগানের পরিচর্যা ও অন্যান্য খরচ বাবদ আমার পাঁচলক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। গতবছর লিচু বিক্রি করে আমার সাড়ে লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এই বছর আশা করছি সেই ক্ষতি পুষিয়ে লাভ হবে। আমরা ইতিমধ্যে ভালো বিক্রি করছি। এছাড়াও আমার বাগানের লিচু এই বছর দেশের বাহিরে রপ্তানি করা হচ্ছে।
জানা যায়, বাগান থেকেই কদমী লিচু প্রতি শত ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং পাতি লিচু সহ অন্যান্য লিচু শ’ প্রতি ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । দীঘিরপাড় এলাকার লিচু চাষী সাগর ইসলাম বলেন, "আমরা পাইকারদের কাছে কদমী লিচু হাজারে পাঁচ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি। পাতি লিচুর দাম এর চেয়ে কিছুটা কম। গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে এই উপজেলায়। সব চাষীরা আনন্দের সঙ্গে লিচু সংগ্রহের কাজ করছে। আমাদের বাড়ির মানুষেরাও আমাদের সহায়তা করতেছে। এ বছর ভালোই বিক্রি করতে পারব।
সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, সোনারগাঁয়ে ১০৭ হেক্টর জমিতে প্রায় ৭২০ টন লিচুর উৎপাদনের হবে আশা করছি। তাবপ্রবাহ কম হলে প্রায় ৭৪০ টন লিচুর ফলন হতো। এ বছর গত কয়েক বছরের তুলনায় অবাক করার মতো ফলন হয়েছে। আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী যারা বাগানে ব্যবস্থা নিয়েছে, সেসব বাগানে ব্যাপক ফলন হয়েছে। এখানের লিচু দেশের বাহিরেও রপ্তানি হচ্ছে। এ বছর প্রায় সাত কোটি টাকা মূল্যের লিচু বিক্রি হবে আশা করছি।