শিরোনাম

ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫(বাসস) : মেট্রোরেলের চেনা পরিবেশ আজ ভিন্ন রকম। অন্যদিনের মতো কর্মব্যস্ত মানুষের আনাগোনা আর চাঞ্চল্যে মুখরিত সময়টি যেন কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছিল।
কোথাও কোথাও যেন প্রাণহীন মানুষের চলাফেরা। কিছুসময় পরপর টেন আসছে, কিন্তু তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। নিত্যদিনের ছোটাছুটি যেমন রয়েছে, তেমনি সারিবদ্ধ হয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে নানা বয়সি মানুষ। দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এসেছেন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা অংশ নেওয়াসহ শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।
সকাল সাতটা থেকেই ভিড় করতে শুরু করে আগ্রহী নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। তাদের দীর্ঘ অপেক্ষাকে সহজ করতে মেট্রোরেলের কর্তব্যরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আন্তরিকভাবে সেবা দিতে দেখা গেছে। মেট্রো স্টেশনের চারপাশটা জুড়ে আতরের সুবাস। যতদূর চোখ যায় নানা বর্ণের টুপি দেখা যাচ্ছে। তারা কেউ কেউ শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন কি না। তবুও তাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটেনি।
মেট্রোরেলের ভেতরে আজ নারী-পুরুষ যাত্রীদের একটাই আলোচনা, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। জানাজায় অংশ নিতে নারীদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের আলোচনায় বেগম জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের নানা দিকগুলোই মূল্যায়িত হচ্ছিল বারবার।
স্টেশনের টিকিট কাউন্টারগুলোতেও দীর্ঘ সারি। কেউ কেউ প্রথমবার মেট্রো ট্রেনে উঠে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজাতে অংশ নিতে ছুটে এসেছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। গেটকীপারদের সেবাও ছিল চোখে পড়ার মতো। আজ যেন সবাই এক মহতী কাজের জন্য নিজেদের সেরাটুকু দিয়েই সেবা দিচ্ছেন। কেই কেউ ফুঁফিয়ে কাঁদছিলেন, কারও চোখে ছিল নীরব অশ্রু-বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু শোকে।
জানাজায় অংশ নিতে মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে কাতারে কাতারে মানুষ দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। মহানগরীর সড়কগুলোতে ছিল নজরবিহীন নীরবতা। জানাজামুখী মানুষের স্রোত। আগারগাঁও, সংসদভবন এলাকা ও ফার্মগেটের সড়কগুলোতেও জানাজায় দাঁড়িয়েছিল লাখ লাখ মানুষ।
মিরপুরের ব্যবসায়ী মাহবুব জামান বলেন, ‘দেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়ার কন্ট্রিবিউশন রয়েছে। উনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। উনাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আমরা জানাজায় অংশ নিতে যাচ্ছি। দেশের মানুষ বেগম খালেদা জিয়াকে ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন। দেশের মানুষ কখনো তাঁর অবদান ভুলবে না।’
মেট্রোরেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন বলেন, অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি। যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনায় ট্রেনের সংখ্যা চার থেকে পাঁচটা বাড়িয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন সানু বলেন, জানাজায় অংশ নিতে তিনি সকালে এসেছে। এত ভিড় ছিল যে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
উত্তরা থেকে আসা আনিকা জামাল বলেন, বাবার সাথে গতকাল রাতেই বরিশাল থেকে এসেছি। সদরঘাট থেকে মিরপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম। জানাজায় অংশ নিতে বেলা ১১টায় স্টেশনে এসে অপেক্ষা করছি।
বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. গফুর হোসেন বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে পুরান ঢাকা থেকে এসেছি। আমরা একজন অভিভাবককে হারালাম। দেশমাতা খালেদা জিয়া চলে গেছেন। আসলে আমরা কী হারিয়েছি, তা জাতি এখন বুঝতে পারবে না। আগামীতে তাঁর শূন্যতা বুঝতে পারবে।
ঢাকার বাইরে থেকে মিরপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে আসা এক যাত্রী, বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে তার চার বছর বয়সি শিশু সন্তানকেও নিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন,‘ঢাকায় যেহেতু আছি তাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এসেছি। ইনশাল্লাহ জানাজায় অংশ নিয়ে তার জন্য দোয়া করবো।’
তিনি আরও বলেন,‘বেগম খালেদা তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও দেশের মাটিতেই ছিলেন।
কোনো কথা বা কারো কোনো বলপ্রয়োগ বা কারো কোনো হস্তক্ষেপে তিনি কোনো আপস করেননি। দেশের বাইরে চলে যাওয়ার ব্যাপারে অনেক রাজনৈতিক চাপ থাকলেও তিনি যাননি। সেইজন্য তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জানাজায় অংশ নিতে এসেছি।’