বাসস
  ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:২০

হিমেল বাতাসে কাবু কুড়িগ্রাম

টানা চার দিন ধরে জেলার তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে অবস্থান করছে উত্তরের সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রাম। ছবি: বাসস

শফিকুল ইসলাম বেবু

কুড়িগ্রাম, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : উত্তরের সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। 

টানা চার দিন ধরে জেলার তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে অবস্থান করছে। শীতের হিম বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছেন জেলার বাসিন্দারা। 

আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র।

তিনি জানান, মাসের শেষের দিকে তাপমাত্রা আরও কমে শৈত্যপ্রবাহের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। এর আগে গতকাল বুধবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মঙ্গলবার ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় পুরো জেলা ঢেকে থাকে। কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে সড়কে মানুষের চলাচল উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশাচালক ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

শীতের প্রভাবে জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, শীতকালে শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক। জেলার নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি ২৯৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শীতজনিত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষের। খোলা পরিবেশে বসবাসকারী এসব মানুষ হিমেল বাতাসে রাতে ঘুমাতে পারছেন না। 

চিলমারী উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় ৭৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। ব্রহ্মপুত্র নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন এ ইউনিয়নে মনতলা, শাখাহাতি, কড়াই বরিশাল চরসহ একাধিক চরে বসবাসরত বৃদ্ধ ও শিশুরা চরম কষ্টে রয়েছে। সরকারিভাবে পাওয়া ১৮০টি কম্বল প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল বলে জানান তিনি।

এদিকে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার নয় উপজেলার শীতার্ত মানুষের জন্য এ পর্যন্ত ২২ হাজার কম্বল বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। জেলার ৪৬৯টি চরের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটের পাশাপাশি শীতে নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছে। সীমান্তঘেঁষা দুর্গম চরাঞ্চলে প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা এখনও পর্যাপ্ত নয়। দ্রুত শীতার্ত মানুষের পাশে না দাঁড়ালে তাদের কষ্টের সীমা থাকবে না।