শিরোনাম

ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যায় মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদের অবস্থান সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (অপরাধ ও অপস) খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
তিনি রোববার রাতে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ ও দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অগ্রগতি বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
খন্দকার রফিকুল আরও বলেন, ফয়সালের শেষ অবস্থানের বিষয়ে আমাদের বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। অনেক সময় অপরাধীরা তাদের অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে।
হাদি হত্যার ঘটনায় আইনি ব্যর্থতা আছে কিনা’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আপনারা বলতে পারবেন, আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অর্গান, আমাদের পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ডিএমপি, ডিবি, র্যাব ও বিজিবি সবাই কাজ করছে।
হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা আছে কিনা জানতে চাইলে খন্দকার রফিকুল বলেন, এটা আমাদের তদন্তকারী সংস্থা বলতে পারবে। পুরো তদন্ত শেষ হলেই এই বিষয়গুলো জানাতে পারব।
অতিরিক্ত আইজিপি আরও বলেন, জনদাবিকে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এ ঘটনায় যাদের নাম আসছে তাদের অনেককেই নজরদারিতে রেখেছি। তাদের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওসমান হাদিকে গুলির পর প্রত্যেক ইউনিটকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসামি গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ জনকে বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়াও ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, অস্ত্র, গুলি ও পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানগুলোতে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি অংশ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র (আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক) উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ২৩ মিনিটে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। খবর পাওয়া মাত্রই র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে ছায়াতদন্তের উদ্দেশ্যে ক্রাইম সিন পরিদর্শন, বিভিন্ন তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যার ঘটনায় জড়িত শ্যুটার ফয়সাল করিম মাসুদসহ অন্যদের শনাক্ত করে। ফয়সালের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং মোটরসাইকেল চালক আলমগীর হোসেনকেও শনাক্ত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির সম্ভাব্য নাম্বার প্লেট (ঢাকা মেট্রো-ল-৫৪-৬৩-৭৫) এবং সেটির মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেফতার করা হয়।
তবে পরবর্তীতে জানা যায়, ফয়সাল করিম তার স্ত্রীর বাসা নরসিংদীতে ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। তারপর তিনি আগারগাঁও-এর উদ্দেশ্যে রওনা করেন। এদিন রাত ৮টায় বোন জেসমিনের বাসায় পৌছাঁন।
পরদিন ১২ ডিসেম্বর ভোর ৫টায় আগারগাঁও থেকে ফয়সাল করিম ও তার সহযোগী আলমগীর হোসেন গ্রীণ জোন রিসোর্টের উদ্দেশ্যে উবারযোগে যাত্রা শুরু করেন। আনুমানিক ভোর সাড়ে ৫টায় গ্রীন জোন রিসোর্টে উপস্থিত হন। আগারগাঁও থেকে রওয়ানার পূর্বেই ফয়সাল করিম তার বান্ধবী মারিয়াকে ভোর ৪টায় ওই রিসোর্টে উপস্থিত থাকার জন্য বলেন।
ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, তদন্ত সূত্রে ১৩ ডিসেম্বর উবার চালক ও গ্রীণ জোন রিসোর্ট বয়কে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মারিয়ার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে দুপুরের দিকে বাড্ডা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
মারিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে রিসোর্টে সহযোগী আলমগীরের সঙ্গে ফয়সাল করিম মাদক সেবন করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে তার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন। যার অনেক কিছুই মারিয়া শুনে ফেলেন। একপর্যায়ে মারিয়া বুঝতে পারেন যে, ওসমান হাদির বিষয়ে তারা উত্তেজিত স্বরে আলোচনা করছেন। এরপর ঘটনার দিন তারা উবারযোগে সকাল আনুমানিক ৯টায় আগারগাঁও-এ বোনের বাসায় যান। এসব বিষয় গ্রীন জোন রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।
গ্রেফতার মারিয়ার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফয়সালের স্ত্রী শাহেদা পারভীন সামিয়া ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপুর অবস্থান শনাক্ত করা হয়। গত ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে শিপুকে নরসিংদী থেকে গ্রেফতার করা হয়।
শিপুর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পরদিন ১৪ ডিসেম্বর ভোর ৬টায় ফয়সালের স্ত্রী সামিয়াকে নরসিংদী সদর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর আগারগাঁও-এ অবস্থিত ফয়সালের বোনের বাসা সনাক্ত করে ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত ২টি ম্যাগাজিন, ১১ রাউন্ড গোলাবারুদ, বিপুল সংখ্যক ব্যাংক চেক এবং অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়।
এছাড়াও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে মো. কবিরকে ফয়সালের সঙ্গে ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করার মাধমে ১৫ ডিসেম্বর দুপুর ১টায় ফতুল্লা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার ফয়সালের স্ত্রী সামিয়ার তথ্য অনুযায়ি, গত ১৬ ডিসেম্বর ভোর আনুমানিক ৫টায় ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে ফয়সলের মা ও বাবাকে গ্রেফতার করা হয়।
ফয়সালের মা ও বাবার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং ফয়সালের শ্যালক শিপুকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে, শিপুর বন্ধু মো. ফয়সালকে গ্রেফতার করা হয়।
আটককৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে যেসব তথ্য জানা যায়, সেগুলো হচ্ছে-ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার পর ফয়সাল ও আলমগীর পুনরায় আগারগাঁও এ যায় এবং হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত পিস্তল ও গোলাবারুদ লুকানোর পরিকল্পনা করে। অস্ত্রের ব্যাগটি সে তার বাবাকে দিয়ে শ্যালক শিপুর কাছে হস্তান্তর করতে বলে এবং সে সিএনজি যোগে সাভারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
পরবর্তীতে ফয়সালের বাবা ব্যাগটি শিপুর কাছে হস্তান্তর করে। শিপু নরসিংদীতে পৌঁছে তার বোন এবং ফয়সালের স্ত্রী সামিয়ার কাছে দেয়। সামিয়া ব্যাগটি শিপুকে লুকানোর জন্য বললে শিপু তার বন্ধু ফয়সালের বাসায় সেটি রাখার জন্য দেয়।
বিজিবি ময়মনসিংহ রিজিয়নের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওসমান হাদিকে হত্যাকারী ময়মনসিংহ আসতে পারে খবর পেয়ে অন্য ফোর্স সঙ্গে নিয়ে সারারাত অপারেশন পরিচালনা করি। ফিলিপের কল হিস্ট্রি ধরে অভিযানে যাই। তবে সে রাতে আমরা ফিলিপকে পাইনি। তাকে ধরার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছি। সে সীমান্তে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত।