বাসস
  ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩:১৬

জ্বালানি রূপান্তরে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে : স্রেডা

ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে গিয়ে সৌর ও বায়ুশক্তির মতো পরিচ্ছন্ন জ্বালানির দিকে রূপান্তরের পরিকল্পনা জোরদারভাবে বাস্তবায়ন করছে বলে আজ জানিয়েছেন টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান মুজাফফর আহমেদ।

স্রেডা চেয়ারম্যান মুজাফফর আহমেদ বাসসকে বলেন, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে, বিশেষ করে সৌর শক্তির দিকে কার্যকর রূপান্তর বাস্তবায়ন করছি, যা জলবায়ু লক্ষ্য (২০৫০ সালের নেট জিরো) অর্জনে অবদান রাখবে।

আহমেদ জানান, বাংলাদেশ দ্রুত সৌরশক্তি ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য উৎস যেমন বায়ু, জলবিদ্যুৎ, বায়োমাস/বায়োগ্যাস সম্প্রসারণ করছে। এর অংশ হিসেবে বাড়ি, ছাদ ও পার্কে সৌরবিদ্যুৎ চালু এবং সেচে এর ব্যবহার বাড়াতে প্রচারণা চলছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে সৌর প্যানেল ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সহায়তা করছে, যাতে জ্বালানি রূপান্তর এবং নেট জিরো লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছিলেন, সৌর ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এবং ‘আমাদের অবশ্যই বাধাহীন শক্তি রূপান্তর নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি বলেন, সরকার সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক নিলামের মাধ্যমে নতুন সৌর শক্তির ট্যারিফ অনুমোদনের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ৪২০ কোটি টাকা সাশ্রয়ের আশা করছে।

নতুন অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মোট ক্ষমতা ৯১৮ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ, যা মূলত বাতিল হওয়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইন, ২০১০-এর অধীনে শুরু হয়েছিল।

স্রেডা জানিয়েছে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশেষত সৌরশক্তি, মোট স্থাপিত ক্ষমতা প্রায় ১ হাজার ৬৯০ দশমিক ৬৩ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি অর্জনের লক্ষ্য রয়েছে, যা বড় সৌর পার্ক, ছাদে সৌরবিদ্যুৎ এবং অফ-গ্রিড সিস্টেমের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।

দেশে অন-গ্রিড নবায়নযোগ্য শক্তি ১ হাজার ৩১২ দশমিক ৩৭ মেগাওয়াট এবং অফ-গ্রিডে ৩৭৮ দশমিক ২৬ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে, পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ বৃদ্ধি করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

স্রেডা জানিয়েছে, নতুন নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০২৫ শিল্প (আরএমজি) ও গ্রামীণ বিদ্যুতায়নের জন্য ছাদে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে গ্রিডে সংযুক্তি ও সম্প্রসারণে চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বড় সৌর প্রকল্প ও ছাদে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা তৈরি করছে, যা বাড়ি ও ক্ষুদ্র শিল্পের বিদ্যুৎ বিল কমাতে সহায়ক হবে। 

বিদ্যুৎ সচিব ফারজানা মোমতাজ সম্প্রতি বলেছেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর পর তা সরকারকে বিক্রি করতে পারবে।

তিনি বলেন, ‘নেট মিটারিং গাইডলাইন-২০২৫ হালনাগাদ করা হয়েছে যাতে ছাদে সৌর প্যানেলের ব্যবহার বাড়ে। নতুন গাইডলাইনে ৭০ শতাংশের পরিবর্তে ১০০ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বাংলাদেশ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক সুবিধা ভোগ করছে, বছরে প্রায় ৩০০ দিন রৌদ্রোজ্জ্বল থাকে।

কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত অফ-গ্রিড এলাকায় ৬০ লাখের বেশি সৌর হোম সিস্টেম (এসএইচএস) স্থাপন করা হয়েছে, যা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। পাশাপাশি কয়েকটি সৌর ফার্ম জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দিচ্ছে, যা প্রচলিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর চাপ কমাচ্ছে।

এছাড়া ব্যবসায়ী ও গৃহস্থরা সৌর প্যানেলের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নেট মিটারিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বিক্রি করতে পারছেন, যা সৌর বিনিয়োগকে আরও লাভজনক করছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, সুইডেন, নরওয়ে ও ডেনমার্কের মতো নর্ডিক দেশগুলো রূপান্তরে নেতৃত্ব দিয়েছে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও যুক্তরাজ্যের মতো বড় অর্থনীতিও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ফস্টারিং ইফেকটিভ এনার্জি ট্রানজিশন ২০২৫ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কয়েক বছরের ধীরগতির পর জ্বালানি রূপান্তরের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়েছে।’

এনার্জি ট্রানজিশন ইনডেক্স (ইটিআই) ১১৮টি দেশের বর্তমান জ্বালানি ব্যবস্থা ও পরিবেশগত প্রস্তুতি মূল্যায়ন করেছে।

ইনডেক্সে দেখা গেছে, জ্বালানি সমতা ও স্থায়িত্বে উন্নতি হয়েছে-জ্বালানি মূল্য হ্রাস, ভর্তুকি সংস্কার, কম জ্বালানি ও নির্গমন তীব্রতা এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানির অংশ বৃদ্ধি এর কারণ। তবে জ্বালানি নিরাপত্তায় সীমিত অগ্রগতি হয়েছে এবং রূপান্তরের প্রস্তুতির গতি কমেছে।