শিরোনাম

ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫-এর আওতায় অনুষ্ঠেয় গণভোটকে কেন্দ্র করে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন ও গণভোট সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের নির্বিঘ্ন কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি এবং নির্বাচনি অবকাঠামো সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও সংস্থাকে সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পরিপত্রে।
আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিশেষ পরিপত্রটি জারি করা হয়।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হবে। এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার পূর্বশর্ত হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, সশস্ত্র বাহিনী ইতোমধ্যে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় মোতায়েন রয়েছে এবং নির্বাচনের সময়েও মোতায়েন থাকবে। সরকার কর্তৃক সশস্ত্র বাহিনীকে প্রদত্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বাহিনী ও সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একাধিক মতবিনিময় সভা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এ দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
পরিপত্র অনুযায়ী, সার্বিক আইন-শৃঙ্খলার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক রাখা, সব দল ও প্রার্থীর বিধি অনুযায়ী নির্বিঘ্ন কার্যক্রম নিশ্চিত করা এবং ভোটাররা যেন নিঃশঙ্ক চিত্তে ও স্বস্তির সঙ্গে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন— তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ভোটকেন্দ্র, নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রসহ সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ও অফিসের নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনি সামগ্রী ও ব্যালট (পোস্টাল ব্যালটসহ) পরিবহন ও সংরক্ষণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গুজব ও অপতথ্যের বিস্তার রোধ এবং জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ ও গোত্র নির্বিশেষে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথাও পরিপত্রে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পঙ্গু, আহত, বয়স্ক, অসুস্থ ও অন্তঃসত্ত্বা ভোটারদের জন্য সহনীয় চলাচল ও ভোটদানের পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি ও অ্যাডজুডিকেশন কমিটি, বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সার্ভিল্যান্স, মনিটরিং ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটিসহ মাঠপর্যায়ে কর্মরত সব কমিটি ও কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও নিরাপত্তা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন কমিশনে স্থাপিত সমন্বয় সেল নিয়মিত যোগাযোগ ও সমন্বয় বজায় রাখবে। আচরণবিধি অনুযায়ী নির্বাচন-পূর্ব ও নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিড মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিকল্পনা প্রণয়ন, সমন্বয় ও তদারকি করবে। একই সঙ্গে বাহিনীগুলোর চেইন অব কমান্ড অক্ষুণ্ন রেখে আন্তঃবাহিনী সমন্বয় নিশ্চিত করা হবে।
পরিপত্রে বলা হয়, সংবেদনশীলতা, ভৌগোলিক অবস্থান ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় কেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে কার্যকর আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার রোধ এবং নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী যে কোনো কর্মকাণ্ড ও সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রতিরোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সম্ভাব্যতা অনুযায়ী কেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি কাভারেজ নিশ্চিত করা হবে। মাঠে ব্যবহৃত আইপি-এনাবলড বডি ক্যামেরার লাইভ ফিড নির্বাচন কমিশনের সমন্বয় সেলে প্রদর্শনের ব্যবস্থাও রাখা হবে।
এছাড়া নির্বাচন কমিশন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বিটিআরসি এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত আইন-শৃঙ্খলা ও অপতথ্য মনিটরিং সেল তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ভোটের পরবর্তী দুই দিন পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
পরিপত্রে বাহিনী মোতায়েনের সময়সূচিও নির্ধারণ করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন-পরবর্তী সাত দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক মোতায়েন থাকবে। ভোটের সময় আনসার ব্যতীত অন্যান্য বাহিনী পাঁচ দিন এবং আনসার বাহিনী ছয় দিন মোতায়েন থাকবে। এ সময় কেন্দ্রভিত্তিক স্থায়ী মোতায়েন, মোবাইল টহল, স্ট্রাইকিং ফোর্স ও সংরক্ষিত ফোর্স প্রস্তুত রাখা হবে।