বাসস
  ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:১০
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:৪১

জনগণের ঐক্যের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক উদার বাংলাদেশ গড়ে তোলার সময় এসেছে: মির্জা ফখরুল

ঢাকায় আজ এক অনুষ্ঠানে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: বাসস

ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশ আজ এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। কোনো চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত না করে জনগণের ঐক্যের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক, উদার বাংলাদেশ গড়ে তোলার সময় এসেছে।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আজ এসব কথা বলেন। সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। 

সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। এছাড়া বক্তৃতা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘যে আমার স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে, তাকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকতে পারে আমি অন্তত মনে করি না। যে শক্তি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, আজ সেই শক্তি ভোল পাল্টে এমন ভাব দেখাচ্ছে যে তারাই নতুন বাংলাদেশ করতে পারবে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এ কথা বিশ্বাস করতে পারে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা লড়াই করে, যুদ্ধ করে একটা স্বাধীন ভূখণ্ড এনেছি। যার ফলে আমরা এখানে বেঁচে আছি, টিকে আছি। এই ভূখণ্ড আজ স্বাধীনতার দিকে থাকবে, নাকি যারা স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করে দিতে চেয়েছিল, তাদের দিকে যাবে, আজকে এই প্রশ্নগুলো আসছে। এই জন্য যে, সেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, এই শক্তি আজকে আবার মানুষকে বিভ্রান্ত করছে সেই ধর্মের নামে। ১৯৭১ সালেও কিন্তু সে ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, ১৯৪৭ সালে এই শক্তি সেদিন পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে। এই শক্তি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। আজকে সেই শক্তি ভোল পাল্টে, চেহারা পাল্টে তারা কিন্তু এমন ভাব দেখাচ্ছে যে তারাই নতুন বাংলাদেশ করতে পারবে। আমরা কেন, সারাদেশের মানুষ এ কথা বিশ্বাস করতে পারে না।’

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের ইতিহাস তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের এদেশীয় সহযোগীদের নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান- বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের হত্যা করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের জন্য মেধাশূন্য করে দেওয়া। তবে সে ষড়যন্ত্র সফল হয়নি এবং দুদিন পরই পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে কখনো সফলতা আসে না। সফলতা আসে সত্যের পথে থেকে, সংগ্রাম ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে।’

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজ দেশ এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। কোনো চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত না করে জনগণের ঐক্যের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক, উদার বাংলাদেশ গড়ে তোলার সময় এসেছে। জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন, বেগম খালেদা জিয়ার স্বপ্ন ও তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার আলোকে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘দেশের মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা মনে করি। সেই সিদ্ধান্ত হচ্ছে নির্বাচনে ধানের শীষের মার্কাকে বেছে নেয়া।’

আসন্ন নির্বাচনকে দুটি শক্তির মধ্যে নির্বাচন হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘একদিকে রয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ- স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও উদার গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি। অন্যদিকে রয়েছে সেই পশ্চাৎপদ শক্তি, যারা অতীতে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে এবং এখন ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। ১৯৭১ সালে যেমন ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়েছিল, আজও একই কৌশল নেওয়া হচ্ছে।’

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা দার্শনিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ অসংখ্য গুণী মানুষকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এই ইতিহাস ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই এবং যারা সেদিন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করেছে, তাদের ক্ষমা করার কোনো কারণ নেই।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করা হয়েছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া হবে। যে শক্তি দেশকে পেছনে নিয়ে যেতে চায়, তাকে প্রতিহত করতে হবে। বাংলাদেশ বরাবরই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ এবং জোর করে কোনো আদর্শ চাপিয়ে দেওয়া এ দেশের মানুষ কখনো মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না।’

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘পরাজিত শক্তি পরাজয় মেনে নিতে না পেরে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না এবং কোনো ষড়যন্ত্রই জনগণের ঐক্যকে পরাজিত করতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার পরীক্ষা দিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। তার নিজের যে অধিকার সে অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করেছে, তার নিজের অস্তিত্বকে রক্ষা করবার জন্য লড়াই করেছে, আজকে থেকে না- সেই মোগল শাসনামল থেকে। আমরা বারো ভুঁইয়ার কথা জানি, আমরা তিতুমীরের কথা জানি... সবার কথাই আমরা জানি। তাই না? সেই জাতি কখনো মাথা নত করতে পারে না, সেই জাতি কখনো পরাজিত হতে পারে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আমার বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করেছে, আমার সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানদেরকে পাকিস্তান আর্মি সেদিন হত্যা করেছে অন্যায়ভাবে। আপনি ইতিহাসগুলো পড়েন, গোবিন্দ চন্দ্র দেবের মতো একজন দার্শনিক, শহীদুল্লা কায়সারের মতো একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক, আবদুল আলীমের মতো একজন বিখ্যাত চিকিৎসক থেকে শুরু করে সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের মতো একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, এভাবে নারী-পুরুষ সকলকে তারা তুলে নিয়ে গিয়ে বধ্যভূমিতে হত্যা করেছিল, আমাদের সকলের সেই ইতিহাস পড়া উচিত। আজকে সেইজন্যই এদেরকে ক্ষমা করার কোন কারণ থাকতে পারে না।’

তিনি বলেন, আমরা সংগ্রাম করেছি গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য। ফ্যাসিস্টদেরকে বিতাড়িত করেছি ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। তার মানে এই নয় যে আমরা আবার নতুন একটা ফ্যাসিস্টকে এনে আমাদের উপরে বসতে দেব। আমরা আরেকটা শক্তি জানবো যে শক্তি আমাদেরকে পেছনে নিয়ে যেতে চায়, সেই শক্তিকে আমরা কখনোই এখানে আসতে দিতে পারি না। একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।