বাসস
  ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৫৪

দিনাজপুরের পাঁচ উপজেলা মুক্ত দিবস ৬ ডিসেম্বর 

ছবি : বাসস

-রোস্তম আলী মন্ডল-

দিনাজপুর, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এইদিনে পাঁচটি উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর দখলমুক্ত হয়েছিল। মুক্ত বাতাসে উড়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৭১-সালের ৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর দখল মুক্ত হওয়া দিনাজপুর জেলার পাঁচটি উপজেলা হচ্ছে- বীরগঞ্জ, বোচাগঞ্জ, কাহারোল বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ। এরপর থেকে প্রতিবছর এই দিনটি জেলার পাঁচ উপজেলায় পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন। 

বীরগঞ্জ: জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কালিপদ রায় জানান, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধাদেও তীব্র প্রতিরোধের পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। ওইদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করে বীরগঞ্জ এলাকাকে শক্রমুক্ত করেছিল। এই সংগ্রামে মুক্তি বাহিনী এবং মিত্র বাহিনীর যোদ্ধারা অংশ নিয়েছিলেন।পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও জেলা ৩ ডিসেম্বর শক্রমুক্ত হওয়ার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সৈয়দপুর অভিমুখে পালিয়ে যাবার সময়ে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। হানাদার বাহিনী বীরগঞ্জ থেকে পিছু হটে বীরগঞ্জ-কাহারোল উপজেলা সীমান্তে দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কে ভাতগাঁও ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে অবস্থান নেয়। ৬ ডিসেম্বর সকালে বীরগঞ্জের অলিগলির মুক্ত বাতাসে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

বোচাগঞ্জ: দিনাজপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পিনাক চৌধুরী জানান, তাঁর মরহুম পিতা এ এফ এম রিয়াজুল হক চৌধুরী মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। ১৯৭১-এ ৬ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের মুখে পাক হানাদার বাহিনীর বোচাগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিকামী জনসাধারণের অংশগ্রহণে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনে বোচাগঞ্জ উপজেলা পাক হানাদার বাহিনীর দখল মুক্ত ঘোষণা করেছিলেন। এদিন সম্মুখ যুদ্ধে ধনতলা গ্রামের আব্দুর বারেক ও এনামুল হক, কাকদুয়ার গ্রামের চিনিরাম দেবশর্মা, বিহাগাঁও গ্রামের কাশেম আলী, রনগাঁও ইউনিয়নের ধনঞ্জয়পুর গ্রামের গুলিয়া বাংরু, বনকোট চুনিয়াপাড়া গ্রামের বীর্যমোহন রায় সহ মোট ১৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এছাড়াও, দুইজনকে পাকিস্তানী বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। 

বিরামপুর: জেলার বিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. লুৎফর রহমান রহমান জানান  ১৯৭১ সালে ৬ ডিসেম্বর সকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী বিরামপুর উপজেলা এলাকা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে মুক্ত ঘোষণা  করেন। পাকিস্তানি সেনারা ৪ ডিসেম্বর পাইলট স্কুলের সম্মুখে ও ঘাটপাড় ব্রিজে প্রচণ্ড শেলিং করে ভাইগড় গ্রাম দিয়ে ভারতের তীরমহনিতে গোলা নিক্ষেপ করে। সম্মুখ যুদ্ধে কেটরা হাটে ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ৭ পাকিস্তানি সেনা নিহত ও শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা আহত এবং  পঙ্গুত্ব বরণ করেন। পঙ্গুত্ব বরণ করা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিন ভারতের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়েছিল। 

নবাবগঞ্জ: ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনী নবাবগঞ্জ উপজেলা এলাকা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে মুক্ত ঘোষণা করেন। এদিন মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে পিছু হটতে থাকে হানাদার বাহিনী। একপর্যায়ে উপজেলার ভাদুরিয়া নামক স্থানে পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে মিত্রবাহিনীর তুমুল লড়াই হয়। নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে পিছুহটে পাশ্ববর্তী ঘোড়াঘাট এলাকায় আশ্রয় নেয় পাকিস্তান বাহিনী। ফলে ওইদি নবাবগঞ্জ উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়।

কাহারোল: ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর আজকের দিনে ভোরে স্থানীয় মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর আক্রমনের মুখে কাহারোল উপজেলা এলাকা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিতাড়িত হয়। ওইদিন সকালে কাহারোল বাজারে বীর মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।