বাসস
  ২১ নভেম্বর ২০২৫, ২১:২১

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপিত

শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সশস্ত্র বাহিনীর দিবসে সেনানিবাসে শিখা অর্নিবাণে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। ছবি : সিএ প্রেস উইং

ঢাকা, ২১ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি ঘিরে আজ শুক্রবার বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। 

কর্মসূচির শুরুতে দেশের সকল সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটির মসজিদগুলোতে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি, সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। 

এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। পুস্পস্তবক অর্পণকালে শহীদদের স্মরণে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা শিখা অনির্বাণে রক্ষিত পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা শিখা অনির্বাণে এসে পৌঁছালে তিন বাহিনী প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার তাঁদেরকে স্বাগত জানান ।

মুক্তিযুদ্ধে শাহাদত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মরণে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষে সম্মিলিতভাবে শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে যান। সেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান এবং মহাপরিচালকবৃন্দ।  

সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধান উপদেষ্টার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে নির্বাচিত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তরাধিকারীদেরকে সংবর্ধনা প্রদান করেন প্রধান উপদেষ্টা। সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের কাছের আত্মীয় এবং ৯৩ জন অন্যান্য খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীসহ সর্বমোট ১০১ জন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। 

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক), প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী লে. জেনারেল আব্দুল হাফিজ (অব.), প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টিটিভ ড. খলিলুর রহমান, সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারসহ উর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আজ অপরাহ্নে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে সেনাকুঞ্জে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই সংবর্ধনায় সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা ছাড়াও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় দূতাবাসসগুলোর বিদেশী কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ভাষণ প্রদান শেষে প্রধান উপদেষ্টা সংবর্ধনাস্থলে আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে কুশল বিনিময় করেন এবং চা চক্রে অংশগ্রহণ করেন।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা সেনাকুঞ্জে এসে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) সস্ত্রীক তাঁকে স্বাগত জানান।

সংবর্ধনায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশী রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, মুখ্য সচিব, বাহিনীত্রয়ের সাবেক প্রধান, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল বীরশ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকারী, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য কিংবা তাঁদের উত্তরাধিকারী, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শহীদ সেনাসদস্যদের পত্নী ও উত্তরাধিকারী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তি, উচ্চপদস্থ অসামরিক কর্মকর্তা এবং তিন বাহিনীর কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ। এই অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে।

পরবর্তীতে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধান বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌ জাহাজ ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটিতেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। 

সন্ধ্যায় বরিশাল, কক্সবাজার, বগুড়া, সিলেট, ঘাটাইল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, যশোর, রংপুর ও খুলনা সেনানিবাস ও ঘাঁটিতে সংশ্লিষ্ট এরিয়া সদর দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৫’ উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  

গণমাধ্যমেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে নানামুখী অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন ২০ নভেম্বর রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর ‘বিশেষ অনির্বাণ’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। বাংলাদেশ বেতার ২১ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় ‘বিশেষ দুর্বার’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। 

২১ নভেম্বরের পরে বেসরকারি টিভি চ্যানেলসমূহ ‘বিশেষ অনির্বাণ’ অনুষ্ঠানটি এবং বেসরকারী রেডিও চ্যানেলসমূহ ‘বিশেষ দুর্বার’ অনুষ্ঠানটি পর্যায়ক্রমে সম্প্রচার করবে। এদিকে, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকসমূহে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। 

এছাড়াও, সশস্ত্র বাহিনীর আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

এদিকে ঢাকা, খুলনা, চাঁদপুর, বরিশাল ও চট্টগ্রামে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনীর জাহাজসমূহ ২১ নভেম্বর বেলা ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বসাধারণের দেখার জন্য নিকটস্থ ঘাটসমূহে নোঙ্গর করা অবস্থায় উম্মুক্ত রাখা হয়।