বাসস
  ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:২২

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচির ডাক

।। বিপুল ইসলাম।।

লালমনিরহাট, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি।

কর্মসূচিতে আহ্বানে জানানো হয়েছে, রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার সর্বস্তরের মানুষ—শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কৃষক-শ্রমিক, ব্যবসায়ী, দোকানদার, ক্রেতা-বিক্রেতা, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকসহ অফিস-আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী—যে যেখানেই থাকবেন, বেলা ১১টায় নিজের কাজ বন্ধ করে ১৫ মিনিট নীরবভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন।

যানবাহন চালকেরাও-মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ট্রাক, বাস কিংবা ট্রেন-ঐ সময় গাড়ি থামিয়ে ১৫ মিনিট অবস্থান করবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা ক্লাস গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন এবং ছাত্র-ছাত্রীরাও শ্রেণিকক্ষে কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন।

আন্দোলন কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সমাজের সব স্তরের মানুষকে আহ্বান জানানো হয়েছে ১৫ মিনিটের জন্য সব ধরনের কাজ বন্ধ রেখে তিস্তা নদীর অস্তিত্ব রক্ষার এই ঐতিহাসিক কর্মসূচিতে সংহতি জানানোর জন্য।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু  গতকাল রাত ১২ টায় তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই কর্মসূচির ডাক দেন।

তিনি জানান,‘সরকার যদি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু না করে, তবে তিস্তাপাড়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’ 

তিনি আরও বলেন,‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে উত্তরাঞ্চলের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। তিস্তা নদী শুধু একটি নদী নয়—এটি আমাদের জীবন, জীবিকা ও সংস্কৃতির প্রতীক। এই নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী কোটি মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে এর পানির প্রবাহ ও পুনরুজ্জীবনের সঙ্গে।’

আগামী ৩০ অক্টোবর বেলা ১১টা থেকে ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচি, যা তিস্তাপাড়ের মানুষের ন্যায্য অধিকারের প্রতীক হিসেবে পালিত হবে।

এই ১৫ মিনিটের নীরবতা হবে তিস্তাবাসীর সম্মিলিত প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি, যার মাধ্যমে জানানো হবে-‘তিস্তা বাঁচলে উত্তরবঙ্গ বাঁচবে, তিস্তা বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে।’


এর আগে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলা—লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা—জুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তার তীরে ১১টি পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন লাখো মানুষ।গত ৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হয় এবং ৯ অক্টোবর উপজেলা শহরগুলোতে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, গত ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় তিস্তা নদীর উভয় তীরে একযোগে মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।

মশাল হাতে অংশগ্রহণকারীরা একযোগে স্লোগান দেন— ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’, ‘তিস্তার ন্যায্য হিস্যা চাই’, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ বাস্তবায়ন চাই’ এবং ‘ডাক দিয়েছেন দুলু ভাই, জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’।

আন্দোলন কমিটির নেতৃবৃন্দ দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।