শিরোনাম
জীতেন বড়ুয়া
খাগড়াছড়ি, ১১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : এক দেশ থেকে অন্য দেশে বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া যায় না। তবে এর কোনটি ছাড়াই আপনি ঘুরে আসতে পারবেন সবুজের ক্যানভাস খ্যাত স্বপ্নের দেশ নিউজিল্যান্ড থেকে। নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন। তবে অবাক হবার কিছুই নেই। বাংলাদেশেই নিউজিল্যান্ড নামে আছে একটি এলাকা। আর সেটি অন্য কোন দেশে নয়। এটি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির একটি এলাকার নাম নিউজিল্যাণ্ড।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্বে আপনি পৌঁছে যাবেন নিউজিল্যান্ডে। অটোরিক্সা, সাইকেল, মোটরসাইকেল কিংবা অন্যান্য যানবাহনে চড়ে এ নিউজিল্যান্ড এলাকা ঘুরে আসা যায়। অনেকে পায়ে হেটে ঘুরে বেড়ান এখানে। নিউজিল্যান্ড এলাকাটি হলো খাগড়াছড়ি সদরের পানখাইয়া পাড়া গ্রামের একটি সড়ক। মূলত পানখাইয়াপাড়া থেকে ধান ক্ষেতের মাঝ দিয়ে আপার পেরাছড়া ও মহিলা কলেজ এলাকাকে সংযুক্ত করতে নির্মিত একটি সড়কের পর পাল্টে যায় এ দৃশ্যপট। ধান ক্ষেতের মাঝখানের সড়ক থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মনোরম দৃশ্য আকর্ষণ করে যে কাউকে। এ ছাড়া এ সড়ক থেকে দূরের আলুটিলা পাহাড়ের গা বেয়ে মেঘ আর রৌদ্র ভেসে চলায় অন্যরকম এক আবহ সৃষ্টি করে। তাই প্রতিদিন এ দৃশ্য দেখতে নানা বয়সী লোকজন ছুটে আসেন এখানে।
নিউজিল্যান্ড সড়কের দুইপাশে সবুজ ক্ষেত এটিই খাগড়াছড়ি শহরের একমাত্র সমতল ভূমি এবং ধান্যজমির একমাত্র বিল। সবুজ শস্যক্ষেত, গাছগাছালি আর তার দূরে পাহাড়ের মিতালি এক অসাধারণ নান্দনিক সৌন্দর্য এখানে ছড়িয়ে আছে। শহরের ভেতরে পাহাড় আর ধানখেতের মিতালি। এলাকার ল্যান্ডস্কেপটা দেখতে নিউজিল্যান্ডের মতো। তাই স্থানীয় মানুষ এর নাম দিয়েছে নিউজিল্যান্ড পাড়া। পাহাড়ি এই স্থান এতোটাই সুন্দর যে, আপনি কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাবেন মুহূর্তেই। এ কারণেই খাগড়াছড়ির এই স্থান পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা জানান, ১৯৯৮ বা ১৯৯৯ সালের দিকে জমির মাঝ দিয়ে একটি কার্পেটিং সড়ক তৈরি করা হয়। সড়কটি তৈরি করার পরপরই লোকজন চলাচল করতে শুরু করেন। সুন্দর সড়কের বিষয়টি ছড়িয়ে যাওয়ায় বিকেল বেলায় বিভিন্ন বয়সের লোকজন সড়কে আড্ডা দিতে যেতে থাকেন। এ সময় এক পাহাড়ি ভদ্রলোক এই এলাকা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে বলেছিলেন, ঠিক যেন নিউজিল্যান্ডের মতো বাতাস। এরপর থেকেই নাকি এলাকার নাম হয়েছে নিউজিল্যান্ড। এর পরপরই জমিতে বসতি গড়ে উঠে।
নিউজিল্যান্ড পাড়ার সবচেয়ে আর্কষণীয় রূপ হচ্ছে সড়কের উপর বসে বর্ষার সময় আলুটিলা পাহাড়ের মেঘের ভেলা দেখা। এখানে পাহাড় আর সবুজ প্রকৃতিই নয় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের এক অপরুপ দৃশ্যের দেখা মেলে। আর নিউজিল্যান্ডের দুই পাশের জমিতে ধান পাকলে দেখা মেলে শতশত টিয়াপাখি। এ ছাড়াও পাহাড়ি জনপদের জীবনযাপনের পদ্ধতিও কাছ থেকেই দেখতে পারবেন।
সরেজমিনে নিউজিল্যাণ্ড পাড়ায় গিয়ে কথা হয় কয়েকজনের সাথে। কবীর চৌধুরী নামে একজন বলেন, নিউজিল্যাণ্ড থেকে আলুটিলার ভিউ ও সবুজের সমারোহ দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। সময় পেলে তাই ছুটে আসি। মন ভরে শ্বাস ও চোখের তৃপ্তি মেটাতে।
নিউজিল্যাণ্ড দেখতে আসা জ্ঞানো চাকমা বলেন, দিদির বাসায় বেড়াতে এসে নিউজিল্যাণ্ড নাম শুনে দেখতে এলাম। নামের সার্থকতা রয়েছে প্রকৃতির এ সুন্দর লীলাভূমিতে।
বিকেলে হাটঁতে আসা রতন দের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একসময় ভাঙ্গা সড়কের কারণে এখানে কেউ আসতো না। গত বছর পৌরসভা থেকে সড়ক সংস্কারের পর এখন আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে এ জনপদ। মানুষজন এখানে এসে শান্তি অনুভব করেন তা দেখে ভালো লাগে। আবার কখনও কখনও দেখি উঠতি বয়সী কিছু তরুণ বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায় এতে করে পথচারী ও দশর্ণার্থীরা ঝুঁকিতে পড়েন। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতনতা ও প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন।
খাগড়াছড়ি পৌর প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিকল্পিত ভাবে নিউজিল্যাণ্ড সড়কটিকে শহরবাসী ও পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি এ সড়কে সৌন্দর্যবর্ধন বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এসব বৃক্ষ যদি বড়ো হয়ে গাছে পরিণত হয় এ সড়কের সৌন্দর্য আরও বাড়বে।
খাগড়াছড়ি ভ্রমণে গেলে পর্যটকরা ‘নিউজিল্যান্ড পাড়া’ থেকে ঘুরে আসতে ভোলেন না যেন।
ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম থেকে যে কোনো বাসে চড়ে প্রথমে পৌঁছাতে হবে খাগড়াছড়ি। এরপর খাগড়াছড়ি শহর থেকে সিএনজি বা অটো রিকশাতে করে নিউজিল্যান্ড পাড়া যেতে পারবেন। খাগড়াছড়ি বাজারের শাপলা চত্বর থেকে অটোরিকশা ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা।
থাকার জন্য খাগড়াছড়ি শহরে পর্যটন মোটেল, হোটেল গাইরিংসহ বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল আছে। সেখান থেকে বাজেটের মধ্যে যে কোন হোটেল বা মোটেল খুঁজে নিতে হবে।