শিরোনাম
কুড়িগ্রাম, ৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : ভারত থেকে আসা আকস্মিক পানির তোড়ে ক্ষতবিক্ষত কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন।
দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ৬৫টি পরিবারের বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। আরো শতাধিক বসতভিটা বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
ভাঙন কবলিতরা আশ্রয়ের খোঁজে দিগি¦দিক ছোটাছুটিসহ জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে ধরনা দিচ্ছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, দুধকুমার নদের ভাঙনে ৪৮টি, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে পার্বতীপুরে ৭টি, ভগবতিপুরে ৩টি এবং গোয়াইলপরী এলাকায় ৭টি মিলে মোট ৬৫টি বসতভিটা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে।
তিনি জানান, ভাঙন কবলিতরা আশ্রয়ের খোঁজে প্রতিদিন বাড়িতে ভিড় করছে। তাদের আশ্রয়ের জন্য কিছুই করতে পারিনি। তবে, সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভাঙন কবলিতদের ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছেন।
তিনি আরো জানান, যেভাবে নদীভাঙন চলছে, এভাবে চলতে থাকলে ইতিহ্যবাহী যাত্রাপুর হাটসহ ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শত শত পরিবার ভাঙনে সর্বশান্ত হবে। দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন যাত্রাপুর ইউনিয়নের পার্বতীপুর গ্রাম ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আতিকুর রহমান (৫৫), আলতাফ হোসেন (৫৭), বক্তারা আলী (৪৫), আলিমা বেগম (৪০), আমেনা বেগমসহ (৪৩) অন্যরা ঘর সরিয়ে নিতে ব্যস্ত। তাদের একটাই কথা— ‘নদী আমাদেরকে থাকতে দিল না।’ ৫ থেকে ৬ বার ঠিকানা বদল করেছে। এখন কোথায় যাবে জানে না।
একই ইউনিয়নের নদী ভাঙনের শিকার ভগবতিপুরের পাষান আলী (৪০), বনিজ আলী (৩৭), আনোয়ার আলী (৫৩), বানিয়া পাড়ার রফিকুল (৪৮), মর্জিনা বেগম (৩৮) এরশাদ আলী (৪০), চন্ডি বেগম (৩৮), জমিলা বেগম (৫৫), জাহিদুল (৩৫), সাহেব আলী (৫২), মজিবর (৫৮) কোথায় যাবে কোথায় থাকবে তা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত।
কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, কুড়িগ্রামে ১৬টি নদীর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের ভাঙন তীব্র। দীর্ঘদিন থেকে ভাঙন চলছে। বিশেষ করে ১৯৫৪ সাল থেকে নদীভাঙন চলছে। এই দীর্ঘ সময় জোড়াতালি দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধ করা হচ্ছে। এতে আমরা সন্তুষ্ট নই।
তিনি আরো বলেন, তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডাব্লিউটি, এনজিওরা নদী শাসন ও চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে এসে লাভবান হয়েছে। কিন্তু নদী ভাঙা মানুষের কোনো উন্নতি হয়নি। তারা ভাঙনে শুধু ঠিকানা বদল করতে বাধ্য হয়েছে। এই যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচতে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো চর বিষয়ক মন্ত্রণালয় হলে নদীভাঙন ও চরের মানুষের জীবন মান উন্নত হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, জেলায় ৩৩টি পয়েন্টে ভাঙন চলছে। ২৫০ কেজি বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধ করা হচ্ছে।