শিরোনাম
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান
খুলনা, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাড়ির পাশে মেহগনি বাগানে চুইঝাল চাষ করে সফল হয়েছেন জেলার রূপসা উপজেলার নৈহাটী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের চাষি মো. আবু জাফর। তিনি বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি চুইঝালের চাষও করে আসছেন দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে। চাষি আবু জাফরের বাড়ির বাগানে অর্ধশত মেহগনি গাছে চুই ঝাল রোপণ করেছেন তিনি। খুলনা ও রূপসার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা তার বাড়িতে এসে চুইঝাল কিনে নিয়ে যান। এতে সীমিত লাভ হলেও ক্ষতির মুখ দেখতে হয়না কখনই।
বাসসের সাথে আলাপকালে চাষি আবু জাফর জানান, গাছ লাগানোর দুই থেকে তিন বছরের মাথায় চুইঝাল বিক্রি করা যায়। সাইজ অনুযায়ী একটি চুইঝাল গাছ ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। খুলনা অঞ্চলসহ রূপসা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা তার বাড়িতে এসে চুইঝাল ক্রয় করতে ভিড় জমান।
এলাকার চুইঝাল চাষিরা জানান, বৃষ্টির মৌসুমসহ বিভিন্ন কারণে চুইঝাল গাছ মারা যায়। কিন্তু গাছগুলো ভালোভাবে পরিচর্যা করা হলে একটি চুইঝাল গাছ থেকে ২০-৩০ হাজার টাকার চুইঝাল বিক্রি করা যায়। চুইঝালে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। তবে গাছ দুর্বল হয়ে গেলে জৈবসার ব্যবহার করা জরুরি। এতে গাছের মান ভালো থাকে বলে জানান এলাকার চুইঝাল চাষিরা।
চাষি আবু জাফর জানান, তিনি চুইঝালসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করেন। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি চুইঝাল চাষ করে আসছেন। চুইঝাল লতা জাতীয় গাছ। তাই তিনি ৫০ টি মেহগনি গাছের সাথে চুইঝাল গাছ রোপণ করেছেন। খুলনা অঞ্চলসহ রূপসা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা তার বাড়িতে এসে চুইঝালের গাছ পছন্দ করে কিনে নিয়ে যায়।
পূর্ব রুপসা কাঁচাবাজারের খুচরা চুইঝাল বিক্রেতা আলাউদ্দিন ধলা বাসসকে বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে চুইঝাল বিক্রি করি। চুইঝালে মাংসের স্বাদ বাড়ে। শরীরের ব্যথা কমে এবং অনেক উপকারও রয়েছে। আমি গ্রাম থেকে পাইকারি ক্রয় করে বাজারে খুচরা বিক্রি করি। মোটামুটি সবসময়ই চুইঝালের ভালো চাহিদা থাকে। বিক্রিও ভালো। চুইঝালগুলো শ্রীরামপুর, কাজদিয়া, নৈহাটি, দেবীপুরসহ মাঝেমধ্যে ফুলতলা থেকে এনে বিক্রি করি।
চুইঝাল বিক্রেতা মো. জাকির শেখ বলেন, চুইঝাল খুব সুস্বাদু মশলা। চুইঝাল মাংস দিয়ে খেতে ভারি মজা লাগে। শরীর ও হাত-পায়ের ব্যথা কমে। এ জন্যই চুইঝালের চাহিদা বেশি। আমি প্রায়ই চুইঝাল কিনে আনি। এক দুইদিন পর পর আমিও খাই।
রূপসা বাজারের খুচরা চুইঝাল বিক্রেতা আহাদ বলেন, চুইঝালের চাহিদা এখনও ভালো। আমি সাত বছর ধরে বিক্রি করে আসছি। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের সময় প্রতিদিন প্রায় ৬০-৭০ কেজি চুইঝাল বিক্রি করা হয়। বর্তমানে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ কেজি চুইঝাল বিক্রি করা হয়।
খুলনা নগরীর ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম. এন. হুদা বাসসকে বলেন, ‘চুইঝাল ঔষধি গুণসম্পন্ন মসলাজাতীয় একটি ফসল। চুই লতার শিকড়, কাণ্ড, পাতা, ফুল, ফল সবকিছুই ভেষজ গুণসম্পন্ন। চুই ঝালের বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। যেমন: এটি গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। খাবারের রুচি বাড়ায়, পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ কমায়। মানসিক অস্থিরতা ও শারীরিক দুর্বলতা দূর করে। শ্বাসকষ্ট, কফ ও কাশি উপশমে সাহায্য করে।’
তিনি বলেন, এর ঔষধি গুণাগুণ ও ঝাঁঝালো স্বাদ রান্নার মাধ্যমে মাংসের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। এটি ক্ষুধামন্দা দূর করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরনের ব্যথাও দূর করতে এটি কাজ করে। এটি ডায়রিয়া প্রতিরোধেও কার্যকর। চুই ঝাল মাংস রান্নায় একধরনের কড়া সুঘ্রাণ এবং ঝাঁঝালো ও টক স্বাদ যুক্ত করে, যা খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে তোলে।