বাসস
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:১৯
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৩

খাগড়াছড়িতে দুর্গাপূজা ঘিরে জমে উঠেছে কেনাকাটা

দুর্গাপূজা ঘিরে জমে উঠেছে কেনাকাটা। ছবি : বাসস

জীতেন বড়ুয়া

খাগড়াছড়ি, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : শারদীয় দুর্গাপূজার আমেজ ঘনিয়ে আসতেই খাগড়াছড়িতে চলছে উৎসবের কেনাকাটার ধুম। শহরের বড় বড় বিপণিবিতান থেকে শুরু করে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান পর্যন্ত এখন জমজমাট কেনাবেচা চলছে। 

পূজার দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। জমে উঠেছে খাগড়াছড়ির শারদীয় দুর্গাপূজার কেনাকাটা। পূজাকে ঘিরে বাজারগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পার্বত্য জেলাগুলোতে শুধু বাঙ্গালী হিন্দু নয়, পাহাড়িদের মধ্যে ত্রিপুরা ধর্মাবলম্বীরাও এ উৎসব পালন করে থাকে।

আজ বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের বিপণিবিতান ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে এখন বইছে উৎসবের হাওয়া। জেলা সদরের বিভিন্ন বিপণিবিতানগুলো ঘুরে দেখা যায়, পোশাক, জুতা, কসমেটিকস, ইমিটেশনের গয়না ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় লেগেই আছে। বিপণিবিতানের পাশাপাশি ফুটপাতের দোকানগুলোতেও ছিল নিম্নবিত্ত মানুষের চোখে পড়ার মতো আনাগোনা। ক্রেতাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। তারা জানান, শেষ সময়ে ভিড় এড়াতে আগেভাগেই কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ।

খাগড়াছড়ির জেলা পরিষদ মার্কেট, সেলিম ট্রেড সেন্টার, বিভিন্ন শপিং মলসহ বিপণিবিতানে পূজার কেনাকাটা চলছে। কেনাকাটা শুরু হয়েছে বেশ কয়েকদিন ধরেই। পূজা উপলক্ষে শঙ্খ, শাঁখা, সিঁদুরসহ পূজার সামগ্রী কেনাকাটার ধুম পড়েছে। খাগড়াছড়ি বাজারের অলিগলিতে এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। 

শহরের কয়েকটি মার্কেট ও দোকান ঘুরে দেখা যায়, জিন্স প্যান্ট ৬০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা, ড্রপ সোল্ডার টি-শার্ট ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শার্ট ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, টি-শার্ট ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

পূজার কেনাকাটা করতে আসা পরিতোষ দে বলেন, ‘পূজায় বাড়িতে যাব। কয়েকদিন আগেই যাব তাই কেনাকাটা করতে আসছি। এখন ভিড় কিছুটা কম, কেনাকাটা করতেও ভালো। আমি পরিবারের সকলের জন্য কেনাকাটা করছি। এবারে জামা কাপড়সহ সব জিনিসের দাম বেশি। কিন্তু আয় তো বাড়েনি। তাই কিছুটা চাপে পড়তে হচ্ছে।’

ক্রেতাদের মধ্যে কেউ পুরো পরিবারের সদস্যদেরও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। কারও কারও সঙ্গে শিশুদেরও দেখা গেছে। বাহারি রঙের জামা-কাপড় ও আনুষঙ্গিক কসমেটিকসের দোকানগুলোতে নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি ছিল। দিনের বেলায় ক্রেতাদের আনাগোনা একটু কম থাকলেও বিকেল গড়ালেই তা বেড়ে যায় বলে জানালেন বিক্রেতারা।

এবারের পূজাকে সামনে রেখে দোকানে বাহারি মালামাল তোলার কথাও জানান তারা।

পূজার কেনাকাটা করতে আসা হরিপদ ত্রিপুরা বলেন, ‘ছেলেমেয়ে আর বউয়ের জন্য কেনাকাটা করলাম। প্রতি বছরের মতো এবারও জামা-কাপড়ের দাম কিছুটা বেড়েছে।’

পূজায় নারীদের অন্যতম চাহিদা থাকে শাড়ির। শহরে প্রাণ কেন্দ্রে আমন্ত্রণ নামের এক শাড়ির দোকানে শাড়ি কিনতে আসা মৌসুমি ত্রিপুরার সঙ্গে কথা হয়। তিনি কথায় কথায় জানালেন, পুজোর কেনাকাটা আগামী দু-একদিনের মধ্যে বাড়বে। তখন ভিড় বেড়ে যাবে, এমন শঙ্কা থেকেই একটু দ্রুত চলে এসেছেন তিনি।

বাবলী ত্রিপুরা বলেন, প্রতি বছরই নিজের ও পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করি। এখন মা আর বাচ্চাদের জন্য করেছি। এখন ভিড় তুলনামূলক কম থাকায় কেনাকাটা করতে ভালো লাগছে।

শাড়ি বিক্রেতা মো. শাহ আলম বলেন, ‘পূজার সময়ে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়। এ সময়ে মূলত কিছু লাভ করা হয়।’

এদিকে শহরের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুমগুলোতেও ক্রেতারা নিজেদের পছন্দমতো পোশাক কিনছেন।

সেলিম ট্রেড সেন্টারের বিক্রেতা শাহনেওয়াজ বলেন, ক্রেতা সমাগম আজ বেশ বেড়েছে। ভালো বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি এবার ভালো বিক্রি হবে। পূজা উপলক্ষে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা গেছে।

কেনাকাটা করতে আসা রূপন দাশ জানান, ‘পূজাকে ঘিরে তার রয়েছে বিশেষ উচ্ছ্বাস। শেষ মুহূর্তের ভিড় আর হুড়োহুড়ি এড়াতেই এখনই কেনাকাটা সেরে নিচ্ছি। আসলে পূজার আনন্দ কেবল মণ্ডপে ঘোরাঘুরিতেই সীমাবদ্ধ নয়, কেনাকাটার মধ্যেও থাকে উৎসবের আসল রঙ। এ মুহূর্তে বাজারে ভিড় তুলনামূলক কম, তাই স্বাচ্ছন্দ্যে পছন্দমতো জিনিস কেনা যাচ্ছে। তবে কয়েকদিন পর যখন মানুষের ঢল নামবে, তখন এভাবে নিশ্চিন্তে কেনাকাটা করা আর সম্ভব হবে না।’

অন্যদিকে শহরের স্বর্ণ অলঙ্কারের দোকানগুলোতেও বিক্রি বাড়ছে সমানতালে। নারীরা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কিনছেন চুড়ি, মালা, আংটি, গলার হার ও প্রসাধনী সামগ্রী। 

বিক্রেতা সঞ্জিব বনিক জানান, পোশাকের পাশাপাশি মেয়েদের স্বর্ন অলঙ্কার, সিঁদুর ও অন্যান্য অনুষঙ্গের চাহিদাও বেড়েছে।

খাগড়াছড়ি বাজারের মনিকা ক্লথ ষ্টোরের মালিক মো. ইউনুছ ও আমন্ত্রণ এর বিক্রেতা মো শাহ আলম জানান, ‘এবার ক্রেতাদের চাহিদা মাথায় রেখে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ডিজাইনের কামিজ, কুর্তি, থ্রি পিছ, ঘের দেওয়া জামা, বিভিন্ন ধরনের থানকাপড় ও নারীদের জন্য জামদানীসহ বিভিন্ন ধরনের বেনারশি সফট কাতান, তসর, বিভিন্ন ধরণের সিল্ক শাড়ি, জর্জেট শাড়ি, হাফসিল্ক, দুপিয়ান শাড়ি এবং দেশি তাঁতের শাড়িও এনেছি। আজ ক্রেতা সমাগম অনেক বেশি। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। আশা করছি, এ বছর ব্যবসা বেশ সফল হবে।’

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

পূজামণ্ডপ, বিপণিবিতান ও জনসমাগমস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। আমরা চাই, পূজা ঘিরে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অশান্তির ঘটনা না ঘটে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘আসন্ন দুর্গাপূজাকে ঘিরে শহরের মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ নজরদারি রয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বদা তৎপর। পূজার সময় যাতে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে কেনাকাটা ও উৎসব পালন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’