বাসস
  ২০ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৪৪

চট্টগ্রাম কাস্টমসের কঠোর নজরদারিতে ১১০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি রোধ

চট্টগ্রাম, ২০ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কঠোর নজরদারিতে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে আমদানি করা একাধিক পণ্য চালান জব্দ হয়েছে। এতে প্রায় ১১০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হয়েছে। 

আজ বুধবার রাজস্ব কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

কাস্টমসের এআইআর শাখার তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে ৭৬২টি ফাঁকির ঘটনা উদ্ঘাটন করা হয়েছে। এসব ঘটনায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা শুল্ক এবং ৬০ কোটি টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে। সব মিলিয়ে সরকারি কোষাগারে অতিরিক্ত ১১০ কোটি টাকা জমা পড়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন বাসস’কে বলেন, ‘রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও আমদানি-রফতানি কার্যক্রমকে গতিশীল রাখতে আমরা সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছি। রাজস্ব ফাঁকির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সরেজমিন পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে।’

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ মাসে মাসিক রাজস্ব আয় ও অতিরিক্ত আদায়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। জুলাইয়ে ১০ কোটি ১৩ লাখ, আগস্টে প্রায় ১১ কোটি, সেপ্টেম্বর ৬ কোটি ৩৪ লাখ, অক্টোবর ৭ কোটি ৫৩ লাখ, নভেম্বর ৬ কোটি ৪২ লাখ, ডিসেম্বর প্রায় ১০ কোটি, জানুয়ারি ৬ কোটি ৭৭ লাখ, ফেব্রুয়ারি ১০ কোটি ৬৮ লাখ, মার্চ ১৮ কোটি ৮২ লাখ, এপ্রিল ৯ কোটি ৩৫ লাখ এবং মে মাসে ১১ কোটি ৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে। মাসভিত্তিক হিসাবে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয় মার্চ মাসে ১৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অন্য মাসগুলোতে আদায়কৃত রাজস্বের অঙ্ক ছিল ৬ থেকে ১১ কোটির মধ্যে।

রাজস্ব প্রবৃদ্ধির শতকরা হার হিসেবে জুলাইতে -৫১.৬৮%, আগস্টে -৫.১৯%, সেপ্টেম্বর +১৫.২৭%, অক্টোবর +৯৩.৫৭%, নভেম্বর +৫১.৭৭%, ডিসেম্বর +৪৮.২১%, জানুয়ারীতে +৪০.৪৬%, ফেব্রুয়ারিতে +৭.৫৫%, মার্চে +৮৮.৬০%, এপ্রিল -৮.৩৩% এবং মে মাসে +৫৪.১৬% প্রবৃদ্ধি হয়েছে। 

উল্লেখযোগ্য, এই সময়কালের রাজস্ব আয় আগের অর্থবর্ষের তুলনায় ১৫ কোটি টাকা বেশি এবং রাজস্ব ফাঁকির ১৪৬টি অতিরিক্ত ঘটনা উদ্ঘাটন করা হয়েছে।

কাস্টমস হাউজ বলছে, আমাদের ‘এআইআর’ শাখার সাফল্য শুধু রাজস্ব বৃদ্ধি নয়, বরং এটি বিদেশে অবৈধ অর্থ পাচারের মতো অপরাধ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা অনেকাংশে শক্তিশালী হয়েছে। এআইআর শাখার কঠোর তদারকির মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে। রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে এবং প্রয়োজনে সরেজমিন অভিযান পরিচালনা করা হবে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি সময়ে রাজস্ব আয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা বেশি। কর্তৃপক্ষের দাবি, এ পদক্ষেপ শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থান তৈরিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন জানান, সন্দেহজনক চালানগুলো দ্রুত চিহ্নিত করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা বাড়ানো হচ্ছে। আমদানিকারক, পরিবহনকারী এবং সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে ফাঁকির পথ বন্ধ করা হচ্ছে বলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ সূত্র জানিয়েছে।