বাসস
  ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১৮:১০

গণহত্যা-পরবর্তী ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং কমিশন গঠনের আহ্বান

ছবি : বাসস

ঢাকা, ৭ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : গণহত্যা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের বাস্তবতায় একটি ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং কমিশন গঠন গুমের শিকার ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন, মনস্তাত্ত্বিক পুনর্বাসন, আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছেন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও ভুক্তভোগীরা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় তারা এসব সুপারিশ তুলে ধরেন। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি (আইআইএলডি) ও বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভ যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন বলেন, গুমের শিকার পরিবারগুলোর পাশে রাষ্ট্রীয়ভাবে দাঁড়ানো উচিত। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতার সঙ্গে ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়াবে।

বিশিষ্ট আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, বারবার সেমিনার না করে বাস্তবভিত্তিক কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভুক্তভোগীদের ব্যবহার করে যেন কেউ রাজনৈতিক ফায়দা না লুটে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীদের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, আমরা তা করতে পারছি না। অবশ্যই বিচার দরকার, কিন্তু দ্রুত বিচার করতে গিয়ে যেন নতুন করে অবিচার না হয়, সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। ভুক্তভোগীদের আর্থিক সহায়তা শুধু ফ্ল্যাটকেন্দ্রিক না হয়ে প্রয়োজনভিত্তিক এবং এটা বণ্টনের একটি যথাযথ নিয়ম অনুসরণ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জাতিসংঘ বাংলাদেশের সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের জন্য বিচার ছাড়াও আরও অনেক কিছু করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কমিশন গঠন নিয়ে ঐক্যমত্য হতে পারে। তারা যে সমস্যার সম্মুখীন, সেগুলো সমাধান হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আমি আমার জায়গা থেকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

অনুষ্ঠানে একাধিক গুমের শিকার ব্যক্তি তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। গুম অবস্থায়া তারা তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি চারণ করেন।

গুমের শিকার ব্যারিস্টার আরমান বলেন, ভুক্তভোগীরা চাকরি কিংবা ব্যবসা কোনো কিছু করতে পারছে না। অবিলম্বে গুম কমিশন গঠন করে ভুক্তভোগীদের জন্য একটি তহবিল গঠন করুন। সরকারের ট্যাক্সের টাকার প্রয়োজন হবে না, সারা দুনিয়া এখানে সহায়তা করবে। এ সময় তিনি প্রশ্ন রাখেন, সরকার এই ভুক্তভোগী কয়টা পরিবারকে সহায়তা করতে পারবে না?

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বক্তব্যে তার ওপর নির্যাতনের কাহিনি তুলে ধরেন। দোষীদের বিচার হওয়ার সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটি অব রেজিনার সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ তার বক্তব্যে গণহত্যা পরবর্তী ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং কমিশনের ডিকলোনিয়াল লোকাল ফ্রেমওয়ার্কের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে গুম নিয়ে সত্যতা স্বীকার করা, ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের মাধ্যমে দোষীদের ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা, আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ গুমের শিকার ব্যক্তিবর্গ ও ভুক্তভোগীদের জন্য একগুচ্ছ সুপারিশ উঠে আসে।

সেমিনারে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে উঠে আসা আরও কিছু উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হলো-গুমের শিকার ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন, কেন্দ্রীভূতভাবে ডেটা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, গুমের শিকার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ভুক্তভোগীদের রাজনীতিকীকরণ না করা এবং সর্বোপরি ভবিষ্যতে গুমের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক শর্মিলা নওশিন রিতু, জাতিসংঘের জুনিয়র কনসালটেন্ট ব্যারিস্টার তাজরিয়ান আকরাম হোসেন।