শিরোনাম
শরীয়তপুর, ৪ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : জেলার জাজিরার মাঝিরঘাট এলাকার ৭০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাটের পাইনপাড়া এলাকায় পদ্মাসেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে গত ৭ জুলাই থেকে প্রায় ১ মাস যাবত অব্যাহত ভাবে থেমে থেমে নদী ভাঙ্গনে প্রায় ৭০০ মিটার ডানতীর রক্ষাবাধ পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পাইনপাড়াসহ ৬/৭টি গ্রামের মানুষ আতংকে দিন কাটছে। তারা বাড়ি ঘর সরিয়ে নিচ্ছে। দিনরাত তাদের ঘুম নেই। কি খাবে কোথায় থাকবে এ নিয়ে তাদের ভিতর দুশ্চিন্তা। তারা অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। তাদের একটাই দাবি কবে হবে স্থায়ী বেড়িবাঁধ? জরুরী ব্যবস্থা না নিলে পুরো এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, স্থায়ী বাঁধ নির্মানের প্রাক্কলন তৈরি করে অনুমোদনের জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে কাজ শুরু করবো।
ক্ষতিগ্রস্থ আ. মান্নান মাদবর জানান, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মাসেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার পদ্মাসেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা। গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে বাঁধের নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকার ভাঙ্গন শুরু হয়। গত বছর ওই বাঁধের যে ১০০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছিল তা ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্পের পূর্ব পাশের নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো ২ কিলোমিটার রক্ষা বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে নিশ্চিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে গত ৭ জুলাই শনিবার ভোর রাতে সংস্কার করা বাঁধের ১০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। একদিনের মধ্যে বাঁধের ২৫০ মিটার অংশ নদীতে তলিয়ে যায়। ভোরে মাইকে নদী ভাঙ্গনের আওয়াজ শুনে এলাকার লোকজন নদীর পাড়ে চলে আসে। তাৎক্ষনিক ভাবে যে যার মত করে ঘর বাড়ি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এলাকা পরিদর্শন করে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধে ঐদিন বিকেল নাগাদ জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ শুরু করে। এ পর্যন্ত এক হাজারের ও বেশি জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। কিন্তু ভাংগন থামছে না। ভাঙ্গনের তীব্রতা এত বেশি যে মুহূর্তের মধ্যে নদীগর্ভে ঘরবাড়ি জমিজমা বিলীন হয়ে যায়। কোন কিছুই সরিয়ে নেয়ার সময় পাচ্ছে না নদী তীরের মানুষ। গত ৭ জুলাই থেকে ৩ আগষ্ট পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মিটার ডানতীর রক্ষাবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে ৩০০ পরিবারের বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। ঐ এলাকার মানুষ খোলা আকাশের নিচে, অন্যের জমিতে বসবাস করছেন। তাদের মাথা গোজার ঠাই নেই। তাদের একটাই দাবি স্থায়ী বেড়িবাধ কবে হবে?
স্থানীয় মনির হোসেন বলেন, পদ্মা নদী গত নভেম্বর থেকে আমার পাইন পাড়া ওসিমদ্দিন মাদবর কান্দি এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দেয়। গতকাল রোববার পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে আমাদের ঘরবাড়ি, দোকান পাট, ঘরের মালামাল আসবাবপত্র জামাকাপড় সবকিছুই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা সরিয়ে নিতে সময়টুকু পাইনি। মুহূর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা একটা স্থায়ী বেড়িবাঁধ চাই। শুধু শুনি হবে। কবে হবে বেড়ি বাধ?
ক্ষতিগ্রস্ত নাছিমা বেগম বলেন, নদীতে আমাদের ঘরবাড়ি সবই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। মাথা গোজার ঠাঁই নেই। পেটে ভাত নেই। কাজ নেই কর্ম নেই। অনাহারে রাত জেগে থাকি। অন্যের জমিতে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করি। সরকারের কাছে দাবি আমাদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করুন।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, ভাঙ্গনের শুরুতেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ডাম্পিং কাজ শুরু করেছে। এ কাজ চলমান রয়েছে। স্থায়ী ভাবে রক্ষাবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলেই কাজ শুরু হবে।
নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শরীয়তপুর জেলা ও জাজিরা উপজেলা প্রশাসন, রেডক্রিসেন্ট, (এসডিএস) নামক এনজিওসহ বিভিন্ন ব্যাক্তি ত্রাণ সহায়তা করেছেন।