শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ ‘জুলাই স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা’ আয়োজন করেছে। আজ সোমবার কলা ভবনের ৬০৩৩ নম্বর কক্ষে সকালে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অংশ নেন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাবলি স্মরণ এবং তা থেকে অনুপ্রেরণা ও শিক্ষা নেওয়ার লক্ষ্যে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান। মুখ্য আলোচক ছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার। সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. মো. মুমিত আল রশিদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিভাগের প্রভাষক ও ছাত্র উপদেষ্টা মিসেস তানজিনা বিনতে নূর।
শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আবু সালেহ। এরপর জুলাই আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণমূলক অংশে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বিভাগীয় শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে চারজন তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তারা জুলাইয়ের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং প্রগতিশীল চিন্তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান শহীদদের স্মরণ করে বলেন, আমাদের দেশের শত বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এখানে সবসময়ই আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার আন্দোলন ও সংগ্রাম হয়েছে। তাই ঐতিহাসিকভাবেই জাতিগতভাবে আমরা ন্যায়ের লড়াইয়ের সৈনিক। তিনি ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় নিজের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভাগ করেন। পাশাপাশি দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে ছাত্র সমাজকে জুলাইয়ের মতই ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বানও জানান।
অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকার বলেন, এই আন্দোলন শুধুই জুলাইয়ের নয়—এটি ১৭ বছর ধরে চলে আসা দীর্ঘস্থায়ী ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের অংশ। তিনি আরো বলেন- মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যেভাবে দলীয়করণ ও অপরাজনীতিকীকরণ করা হয়েছিল, জুলাই আন্দোলনের বিপ্লবী স্পৃহাকে যেন সেভাবে কুক্ষিগত না করা হয়, সে ব্যাপারে সবার সতর্ক থাকা উচিত।
ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী হানিফ জানান কীভাবে আন্দোলনের সময় নিজ বাসা ছেড়ে বন্ধুর আশ্রয়ে ছিলেন এবং পরবর্তীতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী জিল্লুর রহমান তার বক্তব্যে কোটা পুনর্বিন্যাস আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতা ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। ষষ্ঠ সেমিস্টারের আরেক শিক্ষার্থী এবং জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ যোদ্ধা নিওন মণি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ও বিভাগের ছাত্রীদের সাহসী অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইয়াসমিন মিতু বলেন, রাজনৈতিক পরিচয় যেমনই হোক, সমান অধিকারের দাবি প্রত্যেকের- জুলাইয়ের এই শিক্ষা যেন আমরা ভুলে না যাই।
সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. মুমিত আল রশিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ও সহানুভূতিশীল পরিবেশ তৈরি শিক্ষক হিসেবে আমাদের মূল দায়িত্ব। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীদের সচেতনতার মাঝেই দেশের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিহিত।
অনুষ্ঠানের শেষপর্যায়ে বিভাগীয় শিক্ষক ও ছাত্র উপদেষ্টা ড. আহসানুল হাদি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া পরিচালনা করেন এবং ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য দোয়া করেন।