বাসস
  ১৩ জুন ২০২৫, ২০:৪২

সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আনার বার্তা ‘দেশের গণতন্ত্রের জন্য সুসংবাদ’ : মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। ছবি : বাসস

ঢাকা, ১৩ জুন ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার সাথে তারেক রহমানের বৈঠকে সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আনার বার্তা ‘দেশের গণতন্ত্রের জন্য সুসংবাদ’।

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের পর শুক্রবার বিকেলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘জাতি অনেক প্রতীক্ষিত একটি সুসংবাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। প্রায় দুই ঘন্টার এই বৈঠক নিয়ে গোটা জাতি উৎকন্ঠার সঙ্গে অপেক্ষায় ছিলো। আমি যে কথাটি আগেই বলেছিলাম- এই বৈঠকটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আল্লাহর কাছে অশেষ কতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে, সত্যিকার অর্থেই এই বৈঠকটি একটা টানিং পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। আমাদের দুই নেতার বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। যে বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে প্রধান ছিলো নির্বাচন ইস্যু। তারেক রহমানের যে প্রস্তাব তা হলো- এপ্রিলে যে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে সেটা উপযুক্ত সময় নয় বিধায় তা পিছিয়ে নিয়ে আসা। সেই সেক্ষেত্রে গোটা জাতি আনন্দের সাথে লক্ষ্য করলো যে, প্রধান উপদেষ্টা এটাতে সম্মত হয়েছেন। তারা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন।’

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এর মাধ্যমে তারেক রহমান আবারও প্রমাণ করলেন নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রনায়কোচিত যে গুণগুলো থাকা দরকার, তা তাঁর মধ্যে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ গোটা জাতি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলো, সেই বৈঠকটিতে তিনি আল্লাহর রহমতে সফল হয়েছেন। আমি দলের পক্ষ থেকে সকল নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকের পরপরই গাড়িতে উঠেই তারেক রহমান প্রথম টেলিফোনে কথা বলেন মহাসচিবের সাথে। এরপরই গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চতুর্দিকে একটা অনিশ্চিয়তা ছিলো। অনেকে অনেক কথা বলছিলেন। আজকে দুই নেতা প্রমাণ করলেন যে, বাংলাদেশের মানুষ এখনো প্রয়োজনের সময়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে এবং নেতারা নেতৃত্ব দিতে পারেন।’

জাতীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অতীতে যে সমস্ত ছোটখাটো কথা-বার্তা হয়েছে সেগুলোকে ভুলে গিয়ে সামনের দিকে জাতীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করতে হবে। সমস্যাগুলোকে সমাধান করে আমরা যেন অতিদ্রুত একটা নির্বাচন যেটা বলা হয়েছে যে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, সেই নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে যেতে পারি এবং জাতির যে আকাংখা সেটা পুরণ করতে পারি এবং ১৫ বছরের এই ফ্যাসিস্টদের ধবংসস্তুপের মধ্যে যে কাঠামো সেই কাঠামোকে নতুন করে একটা গণতান্ত্রিক কাঠামোতে রুপান্তরিত করতে পারি।’

তিনি বলেন, এই বিষয়টা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা প্রায় ১৫ বছর পর গণতন্ত্রে উত্তরণের একটা সুযোগ পাচ্ছি। ট্রানজিশন টু ডেমোক্রেসি সেই পথে আমরা নিশ্চিত এগিয়ে যাচ্ছি।

গত ১৫ বছরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে জীবনদানকারী নেতা-কর্মী ও জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদ এবং দলের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি তারেক রহমান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বৈঠকের পর আমাদের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কথা হয়েছে। তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে তার মাতা আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র একটা দিনের ব্যাপার নয়। গণতন্ত্র হচ্ছে একটা চর্চার বিষয়। এটা একটা কালচার, সেই কালচার আমাদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। তাই  আসুন আমরা সবাই একসাথে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে দেশকে পূনর্গঠনের জন্য নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে এগিয়ে যাই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আমাদের নেতা তারেক রহমান এবং যেসমস্ত শহীদ প্রাণ দিয়েছেন তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি।’

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মিডিয়া সেলের আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান ও চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন নসু উপস্থিত ছিলেন।