শিরোনাম
ঢাকা, ২০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : দেশের বিচার ব্যবস্থা সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন ও আধুনিক করতে ডিজিটালাইজেশনে সহায়তা প্রদান করছে।
বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন ও কারিগরি পরামর্শের মাধ্যমে ইউএনডিপি মামলার ব্যবস্থাপনা, আদালত পরিচালনা ও জনসেবার ক্ষেত্রে আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতি গ্রহণে বিচার বিভাগকে সহযোগিতা করছে।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, এটি শুধু দক্ষতা বৃদ্ধি করে না, বরং দুর্নীতি ও বাহ্যিক প্রভাবের সুযোগ কমিয়ে দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতাকে জোরদার করে।
তিনি জানান, বিচারবিভাগ সংস্কার প্রক্রিয়ায় জাতীয় নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিয়ে ইউএনডিপি বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করছে। এই মডেলটি বিচার বিভাগকে দীর্ঘমেয়াদে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে সংস্কার প্রক্রিয়া পরিচালনার সুযোগ দেবে।
ইউএনডিপি সুপ্রিম কোর্টকে এমন একটি হটলাইন স্থাপনে সহায়তা করছে, যার মাধ্যমে আদালতে সেবাগ্রহণকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিচারিক স্বাধীনতা লঙ্ঘনসহ পদ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ জানাতে পারবেন।
ইউএনডিপি কর্মকর্তারা জানান, মামলার জট নিরসনে ইউএনডিপি আদালতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে মামলার প্রক্রিয়া আধুনিক ও সহজতর করা যায়। এর আওতায় প্রক্রিয়াগত জটিলতা পর্যালোচনা, ওয়ার্কফ্লো সিস্টেম পুনর্বিন্যাস এবং দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া চালু করা হচ্ছে, যার মধ্যে আদালতের ডিজিটালাইজেশনও অন্তর্ভুক্ত।
জনসচেতনতা ও প্রচার কার্যক্রমের মাধ্যমে ইউএনডিপি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) ও মধ্যস্থতার মতো প্রক্রিয়াগুলোকেও উৎসাহিত করছে, যাতে ছোটখাটো ও দেওয়ানি বিরোধগুলো আনুষ্ঠানিক আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি করা যায়। ফলে বিচার ব্যবস্থার ওপর চাপ কমবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় পরিচালিত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে লিগ্যাল এইড সার্ভিসকেও ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে, যা আদালত ও আইনগত সহায়তা দপ্তরগুলোতে মামলার জট কমানোর আরেকটি কার্যকর উপায়।
সুপ্রিম কোর্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিচারালয়ে মোট ৪৫ লাখ ১৬ হাজার ৬০৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যার মধ্যে আপিল বিভাগে ৩১ হাজার ৬০৬টি, হাইকোর্ট বিভাগে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫১টি এবং নিম্ন আদালতগুলোতে ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার ৮৩২টি মামলা বিচারাধীন।
এর আগে, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে বিচার সংস্কার নিয়ে জনমতের জোরালো আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি দূরদর্শী রোডম্যাপ উন্মোচন করেন।
এই রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ইউএনডিপি সুইডেনের সঙ্গে যৌথভাবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। ইউএনডিপি ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল ও রংপুরে বিচারকদের সঙ্গে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সততা ও জবাবদিহিতা বিষয়ক সিরিজ সংলাপ আয়োজনেও সহায়তা করেছে।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পরিচালিত কর্মশালায় সিরিজ বিচার সেবার রূপান্তর, রোডম্যাপের ব্যাপক সমর্থন যাচাই এবং বিচারিক স্বাধীনতার জন্য বিচারকদের বোঝাপড়া আরও গভীর করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ইউএনডিপি একজন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ ও বিচার সংস্কার সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানাশোনা আরও গভীর করতে আইন বিষয়ক প্রতিবেদক ও সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কর্মশালা সিরিজ আয়োজন করেছে।