বাসস
  ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:৪১
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:০৪

আস্থার বাতিঘর আজিমপুর মাতৃসদন: এমসিএইচটিআই পরিচালক

এমসিএইচটিআই-এর পরিচালক ডা. রাশিদুল আলম। ছবি: বাসস

বরুন কুমার দাশ ও আব্দুর রউফ

ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): কম খরচে কিংবা বিনামূল্যে মানসম্মত সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা দেশে এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এর ব্যতিক্রম রাজধানীর আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (এমসিএইচটিআই)। প্রায় বিনামূল্যে প্রতিদিন অসংখ্য মা ও শিশুকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে হাসপাতালটি।

১৯৯৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফ আজিমপুর মাতৃসদনকে ‘শিশুবান্ধব হাসপাতাল’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে আরও উন্নত সেবা দিতে আইসিইউ স্থাপন ও জনবল বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন এমসিএইচটিআই-এর পরিচালক ডা. রাশিদুল আলম।

তিনি বলেন, ‘আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানটি একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল, যেখানে শুধু নারী ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। বিশেষ করে প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সেবায় প্রতিষ্ঠানটি বেশ সুনাম অর্জন করেছে। তবে কিছুটা ওষুধ ও জনবল সংকট রয়েছে। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে এবং দরিদ্র মানুষের আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছে।’

ডা. রাশিদুল আলম জানান, ১৭৩ শয্যার এই হাসপাতালে ১১৬টি গাইনি ও প্রসূতি এবং ৫৭টি শিশু বেড রয়েছে। মোট বেডের মধ্যে ১০৯টি নন-পেয়িং ও ৬৪টি পেয়িং বেড।

নন-পেয়িং বেডের মধ্যে রয়েছে— ১২টি পোস্ট অপারেটিভ, ১৮টি লেবার ওয়ার্ড, ১৮টি গাইনি, ৩৯টি শিশু ওয়ার্ড এবং ২২টি প্রসূতি বেড। অন্যদিকে ১৮টি শিশু ওয়ার্ড, ৬টি গাইনি, ২৪টি প্রসূতি বেড ও ১৬টি কেবিন রয়েছে পেয়িং বেড হিসেবে।

হাসপাতালের আউটডোর টিকিটের মূল্য মাত্র পাঁচ টাকা এবং ইনডোর টিকিট ১০ টাকা।

এমসিএইচটিআই-এর পরিচালক বলেন, ‘চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি এখানে প্রশিক্ষণ ও গবেষণামূলক কার্যক্রমও পরিচালিত হয়। ধাত্রী, গাইনি ও শিশু চিকিৎসক, নার্সিং ইন্সট্রাক্টর, সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এসএসিএমও), কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), সিনিয়র স্টাফ নার্স, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) ও ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্টদের (এফডব্লিউএ) বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’

এসব প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে, নিরাপদ প্রসব, জরুরি নবজাতক সেবা, নবজাতক ও বাড়ন্ত শিশুর খাদ্য, বুকের দুধ পান ও দুগ্ধদান পরামর্শ, স্থায়ী ও অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, প্রসবপূর্ব ও পরবর্তী পরামর্শ, মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হ্রাস, কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি), কমিউনিটি স্কিল বার্থ অ্যাটেনডেন্ট (সিএসবিএ), জরুরি প্রসূতি সেবা (ইওসি), অ্যান্টি নেটাল কেয়ার (এএনসি), পোস্ট নেটাল কেয়ার (পিএনসি), ক্লিনিক্যাল কন্ট্রাসেপশন, এইডস, আরটিআই ও এসটিআই, সিএমই, আইইউসিডি এবং অস্ত্রোপচারবিষয়ক গবেষণার ওপর ট্রেনিং অব ট্রেইনি (টিওটি)।

ডা. রাশিদুল আলম জানান, ১৯৫৩ সালে মাত্র ২০টি শয্যা নিয়ে আজিমপুর মাতৃসদনের পথচলা শুরু হয়। পরে ২০০০ সালে জাপান সরকারের সহায়তায় হাসপাতালটিকে আধুনিকায়ন করা হয়। বর্তমানে এটি ১৭৩ শয্যার একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে রূপ নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পুরান ঢাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে আজিমপুর মাতৃসদন একটি আস্থার নাম। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে। এখানে সন্তান প্রসব থেকে শুরু করে ওষুধ ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রায় বিনামূল্যে করা হয়। সে কারণে শুধু আজিমপুর নয় এখানে রাজধানীর অদূরে গাজীপুর, কেরাণীগঞ্জ ও নবাবগঞ্জ থেকেও অনেকে চিকিৎসা নিতে আসেন।’

পরিচালক আরও বলেন, ‘গর্ভাবস্থার শুরুতেই এখানে কার্ড করালে চিকিৎসকেরা সমস্যা ধরে ধরে প্রসূতিদের নিয়মিত সেবা দেন। গর্ভবতী নারীদের পাশাপাশি পরিবার পরিকল্পনা, গাইনি ও শিশু চিকিৎসাসেবাও এখানে দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ১৭৩ শয্যার এই হাসপাতালে সব সময় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ বেডে রোগী ভর্তি থাকে। শয্যার অতিরিক্ত রোগী কখনো ভর্তি নেওয়া হয় না। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় আউটডোরে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়লেও, সীমাবদ্ধতার মধ্যেই সেবা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।’

পরিচালক ডা. রাশিদুল আলম বলেন, ‘সেবা নিতে আসা অধিকাংশ নারী নিয়মিত চেকআপের জন্য মাতৃসদনে আসেন। প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে রক্ত পরীক্ষা ও আলট্রাসনোগ্রাফিসহ প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা এখানে করানো যায়। শুধু নারী চিকিৎসকরাই এখানে ডেলিভারি করান, ফলে রোগীরা স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা অনুভব করেন।’