বাসস
  ৩০ মে ২০২৫, ০৯:০৬
আপডেট : ৩০ মে ২০২৫, ০৯:১৫

বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী, সফল রাষ্ট্র নায়ক জিয়াউর রহমান : ড. আব্দুল মঈন খান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। ফাইল ছবি

ঢাকা, ৩০ মে, ২০২৫ (বাসস) : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক, উন্নয়নের রাজনীতির প্রবক্তা, বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী। তিনি ছিলেন সততা ও নিষ্ঠার প্রতীক। তিনি ছিলেন স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রকৃত রূপকার এবং স্বনির্ভর আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। মহান মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বের সাথে সম্মুখযুদ্ধে লড়াই করেছেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে দেশের দায়িত্ব নিয়ে সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। 

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির এই নেতা বলেন, মাতৃভূমির একাধিক চরম দুঃসময়ে দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়নের পথে সব অনিবার্য সমস্যা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সাহস, দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা তিনি অর্জন করেছিলেন অপার দেশপ্রেম এবং দায়িত্ব পালনের নিষ্ঠা থেকে।

তিনি জনগণকে ভালোবেসে তাদের কল্যাণে আন্তরিক ছিলেন বলেই জনগণ অন্তর দিয়ে তাকে ভালোবেসেছে। তার নির্দেশনা, অনুরোধ, পরামর্শ গ্রহণ করেছে এবং উপকৃত হয়েছে।

ড. মঈন খান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজের কিংবা পরিবারের জন্য কিছুই রাখেননি। এমন একজন মহাপ্রাণ দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধা, মাতৃভূমিতে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী, দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির সোপান রচনাকারী, মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ ফসল বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী এবং বাসযোগ্য ও মর্যাদাবান একটি রাষ্ট্র গঠনে তিনি ছিলেন জনগণের নির্ভরযোগ্য ও প্রত্যাশার বাতিঘর। 

জিয়াউর রহমানকে কাছ থেকে দেখা বিএনপির এই সাবেক মন্ত্রী বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে আমরা হারিয়েছি এমন এক সময়ে, যখন দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণ প্রত্যাশী জনগণ তার সুযোগ্য নেতৃত্বে উন্নয়ন ও শান্তি অর্জনের কর্মযজ্ঞে সক্রিয় এবং নিশ্চিত ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রত্যাশায় উদ্দীপ্ত ছিল; দেশ-বিদেশে যখন বাংলাদেশ মর্যাদা ও আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করতে শুরু করেছিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে ১৯৮১ সালের ৩০ মে শুধু জিয়াউর রহমানকে কেড়ে নেয়নি; এ দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির জোয়ারও থামিয়ে দিয়েছিল। লাখ লাখ অশ্রুসিক্ত মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত জানাজা যে অতুলনীয় মর্যাদায় তাকে অভিষিক্ত করেছে, তা অতিক্রম করার সৌভাগ্য আর কারও হবে কিনা এটি শুধু ভবিষ্যতই বলতে পারবে।

তিনি বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞে বিপর্যস্ত এ দেশের জনগণ একাত্তরের ২৭ মার্চ প্রথমবার ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ শুনে যেমন উদ্দীপ্ত হয়েছিল, মনে সাহস পেয়েছিল; ঠিক তেমনি ’৭৫-এর ৭ নভেম্বর দেশের আরেক ভয়াবহ দুঃসময়ে ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি’ শুনে আশ্বস্ত ও নিশ্চিন্ত হয়েছিল। সবাই এসব সত্য জানে বলেই শহীদ জিয়ার স্মৃতি মুছে ফেলা যায়নি। মুছে ফেলা যাবেও না কখনো। 

দেশের জন্য জিয়াউর রহমানের অবদান তুলে ধরে ড. মঈন খান বলেন, আজ বাংলাদেশের যা কিছু গৌরবের, তার মধ্যে রয়েছে রপ্তানিমুখী শিল্প, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, কৃষির উন্নয়ন কিংবা বিদ্যুৎ। এসব নিয়ে গৌরব করতে হলে যিনি এগুলোর সূচনা করেছিলেন; সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রও তিনি প্রস্তুত করেছিলেন। অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি, নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা এসব অর্জন শহীদ জিয়ার রাষ্ট্রনায়কোচিত দূরদৃষ্টির প্রমাণ করে তিনি কতোটা সফল রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তিনি বন্ধ শিল্প চালুর পাশাপাশি নতুন শিল্প গড়ে তোলেন। তার শাসনামলে কুটির শিল্পের বিকাশ ঘটানো হয়। উৎপাদন বাড়ানো হয়। বেকার জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রূপান্তর করা হয়।

মঈন খান বলেন, জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই দেশে পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিনিই প্রথম মধ্যপ্রাচ্যে সাড়ে আট হাজার জনশক্তি রপ্তানি করেন, যা আজ প্রায় সোয়া কোটিতে পরিণত হয়েছে। এই জনশক্তি দিয়ে আজ দেশে ১৮ বিলিয়ন এবং পোশাকশিল্প দিয়ে ৪০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হচ্ছে। পোশাকশিল্পের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র ৭০ শতাংশ নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে।

মঈন খান বলেন, জিয়াউর রহমান গ্রামে শিল্পের মাধ্যমে উন্নয়নে পল্লী বিদ্যুতায়নের প্রথম উদ্যোগ নিয়েছেন। বাপেক্স গঠন করেছেন। বঙ্গোপসাগরে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ মাছ রপ্তানি শুরু করেন। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গিনিতে চাল রপ্তানি করেছেন। চিনি রপ্তানি করেছেন। জিয়া শুধু কৃষক ও শ্রমিকদের উন্নয়নে উৎপাদনের রাজনীতি করেছেন। যুব ও নারীশক্তিকে সমৃদ্ধ করেছেন। যুব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করেছেন।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানই প্রথম উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি শুরু করেন। এ মন্ত্র দিয়েই তিনি বিএনপি গঠন করেন। যা কিছু উৎপাদনের পক্ষে, সেটাকেই তিনি গ্রহণ করলেন। সেচ, সার, আর্থিক সহায়তা, বীজ সংরক্ষণ; সর্বোপরি গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের উদ্দীপ্ত করে যিনি খাদ্যোৎপাদন বাড়িয়েছেন। সাধারণ মানুষকে বুকে জড়িয়ে ধরে তাদের অন্তরের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। 

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন বলয় থেকে বেরিয়ে আমেরিকা এবং চীনের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। মুসলিম বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। মুসলিম দেশগুলোর সাথে ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য বাংলাদেশের সংবিধানে একটি অনুচ্ছেদ যোগ করেন। 

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জোট সার্ক গঠনের ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। এছাড়া জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়।

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে আজকে দীর্ঘ ৪৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে। পরবর্তীতে যে নতুন প্রজন্ম এসেছে তারা জিয়াউর রহমান সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন না। এ কারনেই তাদের সামনে জিয়াউর রহমানের জীবনের সত্যিকারের দর্শন তুলে ধরতে হবে। 

তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কে সেটা দেশের মানুষ সবাই জানেন, তবুও তিনি কে সেটা সরাসরি জানার সাধ্য আমারও হয়নি। আমি তাকে জেনেছি দ্বিতীয় প্রজন্মে। প্রথম প্রজন্মে জিয়াউর রহমান কে সেটা জেনেছিলেন, আমার বাবা আব্দুল মোমেন খান। তিনি জিয়াউর রহমানের সময়কালে খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন। দেশের তৃতীয় প্রজন্মের নাগরিকরা জিয়াউর রহমান সম্পর্কে এখনো অধরা। 

মঈন খান বলেন, আমার সঙ্গে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যখন প্রথম সাক্ষাৎ হয়, আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিমকে বঙ্গভবনে ডেকেছিলেন। তিনি বলেছিলেন আপনাদের এখানে ডেকেছি আমাকে একটি পরামর্শ দেয়ার জন্য। অসীম ক্ষমতাবান একজন রাষ্ট্রপতি হয়ে তিনি শিক্ষকদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আপনারা আমাকে পরামর্শ দেবেন বাংলাদেশের এনআরবি পলিসি কি হওয়া উচিৎ। সে সময় আমরা তাকে এনআরবি বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম,  যা তিনি সানন্দে গ্রহণ করেছিলেন। এতেই প্রামাণ হয়, ক্ষমতার অংহঙ্কার তার একেবারেই ছিলো না।