বাসস
  ৩০ মে ২০২৫, ০৯:০৩
আপডেট : ৩০ মে ২০২৫, ১৭:৫৩

ক্রান্তিকাল উত্তরণে জাতির দিশারী ছিলেন শহীদ জিয়া : ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ফাইল ছবি

রুমানা জামান

ঢাকা, ৩০ মে, ২০২৫ (বাসস) : বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, জিয়াউর রহমানের পুরো জীবনটাই সফল। সেই সৈনিক জীবন থেকে শুরু করে, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার, ক্যান্টনমেন্টে ফেরত আসা, আওয়ামী লীগের সময়ে ক্যু, কাউন্টার ক্যু এসবের ক্রমধারায় ৭ নভেম্বরে সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আবার জিয়াউর রহমানকে ফিরিয়ে আনা হয়। সবকিছু মিলে তার পুরো জীবনটাই ছিলো সফলতার গল্পে মোড়ানো। ক্রান্তিকাল উত্তরণে শহীদ জিয়া ছিলেন জাতির দিশারি। 

সম্প্রতি বাসস প্রতিনিধি রুমানা জামানের সাথে একান্ত এক সাক্ষাতকারে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কথা বলেন।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের কিছু স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৫ আগস্ট থেকে ৭ নভেম্বরের মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে একটি সামরিক অভ্যুত্থান হয়। এতে খন্দকার মোশতাক সরকারের পতন ঘটে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দি করা হয়। পাঁচ দিনের মাথায় আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। যাকে দেশবাসী সিপাই-জনতার অভ্যুত্থান হিসেবে গ্রহণ করে। এই অভ্যুত্থানের পর শহীদ জিয়া জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। দেশবাসীকে তিনি শান্ত থাকতে বলেন এবং বাংলাদেশকে রক্ষার আহ্বান জানান। পরে সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে রাষ্ট্রপতি তাকে নিয়োগ দেন।

তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে খন্দকার মোশতাকের পরিবর্তে সাবেক প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এক সময় সায়েম শারীরিক কারণে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানান। এই পরিবর্তন ছিল ঐতিহাসিক। কারণ একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে পুনর্বার বহুদলীয় শাসনব্যবস্থায় দেশ ফিরে আসে।

ড. মোশাররফ বলেন, জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর বিনা ভোটে ক্ষমতায় না থেকে দেশে ‘হ্যাঁ’-‘না’ ভোটের আয়োজন করেন। সেখানে তাকে জনগণ বিপুল ভোটে সমর্থন জানান। জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দেন। সেখানে জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ জেনারেল এমএজি ওসমানীকে জাতীয় গণতান্ত্রিক ঐক্য জোটের প্রার্থী করে। জিয়াউর রহমান প্রার্থী হন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের। এই নির্বাচনে জিয়াউর রহমান বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। 

জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বিপুল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ ও জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন। তিনি অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন, একটি সদ্য স্বাধীন দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে যেমন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা। তাই তিনি ১৯ দফা-সংবলিত রাজনৈতিক দর্শন উপস্থাপন করেছিলেন। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে রাজনীতিতে মেধাবী ও পেশাজীবী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করেছিলেন। তিনি অনুধাবন করেছিলেন, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারীদের অবহেলিত রেখে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই তাদের কর্মক্ষম করে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
ড. মোশাররফ বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশিদের সুস্পষ্ট একটা পরিচয় দেন, সেটি হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। দুর্নীতি, অনাচার বন্ধ করেছিলেন। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। খাল খনন করে কৃষিকাজে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। বিএডিসি গঠনের মাধ্যমে কৃষকের কাছে সার, বীজ, কীটনাশক সুষ্ঠু বিতরণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। বন্ধ শিল্প চালুর পাশাপাশি নতুন শিল্প গড়ে তোলেন। বেকার জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিকে রূপান্তরিত করেন। 

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হবার পরে বাংলাদেশ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় রাজনীতিতে ফেরে। বহুদলীয় রাজনীতির পুনঃপ্রবর্তনের ফলে তৎকালীন বাংলাদেশে একটি মৌলিক পরিবর্তন আসে। 

জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ড. মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন মতের ও ধর্মের জাতিগোষ্ঠী বাস করে। তাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার মাত্রা ও ধরণ ভিন্ন। তাই জিয়া মনে করেছেন, শুধুমাত্র ভাষা বা সংস্কৃতির ভিত্তিতে নয়, বরং ভূখণ্ডের ভিত্তিতেই জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করা উচিত।

বিএনপির এই সাবেক মন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই দেশে পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। গ্রামে শিল্পের মাধ্যমে উন্নয়নে তিনিই পল্লী বিদ্যুতায়নের প্রথম উদ্যোগ নিয়েছেন। বাপেক্স গঠন করেছেন। জিয়া কৃষক ও শ্রমিকের উন্নয়নে উৎপাদনের রাজনীতি করেছেন। যুব ও নারীশক্তিকে সমৃদ্ধ করেছেন। 

জিয়াউর রহমান উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি সামনে রেখেই বিএনপি গঠন করেন উল্লেখ করে ড. মোশাররফ বলেন, জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর অনেকেই মনে করেছিল, বিএনপি ধসে যাবে। কিন্তু ধসে যায়নি। তার অনুপস্থিতিতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দায়িত্ব নিয়েছেন। আপসহীনভাবে স্বৈরাচার সরকারকে হটানোর জন্য দীর্ঘ নয় বছর আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছেন। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এ রকম নেত্রী বাংলাদেশে আর কেউ নেই।