শিরোনাম
ঢাকা, ৩১ মে, ২০২৫ (বাসস) : ইসরাইল শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছে, গাজায় বন্দি বিনিময়ের একটি প্রস্তাব হামাস মেনে না নিলে তাদের ‘নিশ্চিহ্ন’ করে দেওয়া হবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।
এ সময় গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট চলছে এবং জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে—গাজা উপত্যকার পুরো জনগোষ্ঠী দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।
গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফের উপস্থাপিত চুক্তি হামাসকে গ্রহণ করতেই হবে, নইলে তাদের ধ্বংস করা হবে। তিনি বলেন, 'হামাসের খুনিদের এখন বেছে নিতে হবে: ‘উইটকফ চুক্তি’ অনুযায়ী জিম্মিদের মুক্তি দেবে, নাকি নিশ্চিহ্ন হবে।'
ইসরাইল বহুবার বলেছে, যুদ্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো হামাসকে ধ্বংস করা। গাজায় প্রায় ২০ মাস ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার চেষ্টা এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে মার্চে অল্প সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও পরে ইসরাইল ফের হামলা শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, 'ওরা (ইসরাইল ও হামাস) গাজা নিয়ে চুক্তির খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। আমরা হয়ত আজ অথবা আগামীকাল বিষয়টি জানাবো।'
গাজায় এখনও তীব্র খাদ্যসংকট বিরাজ করছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা অবরোধ ইসরাইল কিছুটা শিথিল করলেও সহায়তা খুবই ধীরগতিতে প্রবেশ করছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থার মুখপাত্র ইয়েন্স লারকে বলেন, 'গাজা বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধাক্লিষ্ট এলাকা।' তিনি বলেন, 'একমাত্র নির্দিষ্ট অঞ্চল হিসেবে গাজাই সেই জায়গা, যেখানে পুরো জনগোষ্ঠী দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।'
পরে জাতিসংঘ জানায়, সশস্ত্র ব্যক্তিরা গাজার একটি গুদাম থেকে অপুষ্ট শিশুদের জন্য সংরক্ষিত চিকিৎসা সামগ্রীসহ বিপুল পরিমাণ সাহায্যসামগ্রী লুট করেছে।
সহায়তা সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় খাদ্য ও ওষুধের জন্য মানুষের মরিয়া হয়ে পড়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
ইসরাইলের ‘ক্রুসেড’ ও নতুন বসতি ঘোষণা
ইসরাইল একদিকে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি নির্মাণ দ্বিগুণ করছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এবং অন্য বিশ্বনেতারা দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান দাবি করলেও ইসরাইল তা উপেক্ষা করছে।
এই সপ্তাহেই ইসরাইল অধিকৃত পশ্চিম তীরে ২২টি নতুন বসতির ঘোষণা দিয়েছে। অঞ্চলটি ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরাইলের দখলে রয়েছে।
ব্রিটেন বলেছে, ইসরাইলের এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পথে ‘ইচ্ছাকৃত বাধা’। মিশর একে ‘উসকানিমূলক এবং আন্তর্জাতিক আইন ও ফিলিস্তিনি অধিকার লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট নতুন উদাহরণ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
৫৭ সদস্যের ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) যার মধ্যে মিশরও রয়েছে, তারা এই ঘোষণার নিন্দা জানিয়েছে।
শুক্রবার কাৎজ 'পশ্চিম তীরে একটি ইহুদি ইসরাইলি রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে' বলে ঘোষণা দেন।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, ইসরাইলি বসতিগুলো অবৈধ হিসেবে বিবেচিত এবং এগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পথে বড় বাধা হিসেবে দেখা হয়।
কাৎজ মাখোঁর অবস্থানকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তাদের এই পদক্ষেপ ওইসব নেতার জন্য একপ্রকার প্রত্যুত্তর, যারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চাইছে।
শুক্রবার মাখোঁ বলেন, কিছু শর্তসাপেক্ষে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া 'কেবল নৈতিক কর্তব্য নয়, বরং রাজনৈতিক প্রয়োজনও'।
এর জবাবে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে মাখোঁকে অভিযুক্ত করে বলেছে, তিনি 'ইহুদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক ধরনের ক্রুসেডে নেমেছেন'।
এদিকে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আগামী রোববার সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান পশ্চিম তীরে এক ঐতিহাসিক সফরে যাচ্ছেন।
‘শিশুদের টুকরো টুকরো লাশ’
হোয়াইট হাউস বৃহস্পতিবার জানায়, ইসরাইল যুদ্ধবিরতির একটি নতুন প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে, এবং এটি হামাসকে দেওয়া হয়েছে।হামাস জানিয়েছে, প্রস্তাবটি তাদের দাবি পূরণ করেনি। তবে তারা তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করে বলেছে, 'এটি নিয়ে আলোচনা-পরামর্শ চলছে।'
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ জানায়, শুক্রবার ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সাতজন মারা যায় জাবালিয়ার একটি বাড়িতে হামলায়।
গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে নিহতদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এক প্রতিবেশী মাহমুদ আল-ঘাফ বলেন, 'ওরা সবাই সাধারণ মানুষ, নিজেদের ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। বাচ্চাদের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।'
ইসরাইলি সেনাবাহিনী এ বিষয়ে আলাদা করে কিছু জানায়নি, তবে বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় 'ডজন খানেক লক্ষ্যবস্তুতে' বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইলের নতুন হামলায় অন্তত ৪,০৫৮ জন নিহত হয়েছে। ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে মোট নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪,৩২১ জনে, যাদের বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ।
২০২৩ সালের হামাস আক্রমণে ইসরাইলে ১,২১৮ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক। সেই আক্রমণে হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এখনও ৫৭ জন গাজায় রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যুর বিষয়টি ইসরাইলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে।