বাসস
  ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:৪৭

বৈশ্বিক উষ্ণায়নে ভূমিকা রাখছে হাইড্রোজেনও : গবেষণা

ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে হাইড্রোজেনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি বরং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সমস্যার কারণ হিসেবেই ভূমিকা রাখছে।

প্যারিস থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

হাইড্রোজেনের পক্ষে থাকা বিশেষজ্ঞদের আশা, ভবিষ্যতে পরিবহন ও ভারী শিল্পে বড় পরিসরে এটি উৎপাদন ও ব্যবহার করা যাবে। কারণ, হাইড্রোজেন জ্বালানি পোড়ালে কেবল জলীয় বাষ্প নির্গত হয়, যা জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় পরিবেশবান্ধব।

তবে সম্প্রতি নেচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, হাইড্রোজেন পরোক্ষভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস মিথেনকে বায়ুমণ্ডলে বেশি সময় ধরে টিকে থাকতে সহায়তা করে।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, ১৯৯০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে হাইড্রোজেনের নির্গমন বেড়েছে। এর ফলে প্রাক-শিল্প যুগের পর থেকে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা প্রায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ০.০২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির জন্য দায়ী হাইড্রোজেন গ্যাস নিজেই।

গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী রব জ্যাকসন বলেন, জলবায়ু নিরাপদ ও টেকসই হাইড্রোজেন অর্থনীতি গড়ে তুলতে বৈশ্বিক হাইড্রোজেন চক্র এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে এর সম্পর্ক বিষয়ে আরও গভীর বোঝাপড়া প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের জোট গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্ট পরিচালিত এ গবেষণায় বলা হয়েছে, হাইড্রোজেন নির্গমনের বৃদ্ধির প্রধান কারণ মানব সৃষ্ট কর্মকাণ্ড।

গবেষকদের মতে, জীবাশ্ম জ্বালানি, গবাদিপশু ও বর্জ্যভূমি থেকে নির্গত মিথেন বাড়ার সঙ্গেও হাইড্রোজেন বাড়ার সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, বায়ুমণ্ডলে মিথেন ভাঙনের সময় হাইড্রোজেন তৈরি হয়।

হাইড্রোজেন নিজে দূষক না হলেও, এটি পরোক্ষভাবে উষ্ণতা বাড়ায়। এটি বায়ুমণ্ডলের প্রাকৃতিক ‘ডিটারজেন্ট’ বা পরিষ্কারক উপাদান শোষণ করে নেয়, যেগুলো মিথেন ধ্বংসে সহায়তা করে। ফলে মিথেন বেশি সময় ধরে টিকে থাকে।

গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ও যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামার অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোসিস্টেম মডেলিংয়ের সহকারী অধ্যাপক জুতাও ওউয়াং বলেন, বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেন বাড়লে প্রাকৃতিক ডিটারজেন্ট কমে যায়। এতে মিথেন দীর্ঘদিন থেকে যায় এবং জলবায়ুকে দীর্ঘ সময় উষ্ণ রাখে।

তিনি আরও বলেন, এই প্রক্রিয়া মেঘ গঠনের ওপরও প্রভাব ফেলে এবং ওজোন ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক জলীয় বাষ্পের মত গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি করে।

১৯৯০ সালের পর থেকে বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেন বৃদ্ধির অন্য উৎস হিসেবে শিল্পকারখানায় উৎপাদিত হাইড্রোজেনের লিকের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

হাইড্রোজেন উৎপাদনের আরেকটি উপায় হল পানিতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন আলাদা করা, যাকে ইলেক্ট্রোলাইসিস বলা হয়।

তবে বর্তমানে অধিকাংশ হাইড্রোজেন উৎপাদিত হয় প্রাকৃতিক গ্যাস বা কয়লা থেকে। এসব প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়।

গবেষকদের লক্ষ্য হল নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বড় পরিসরে ‘সবুজ’ হাইড্রোজেন উৎপাদন। তবে এই প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল এবং খাতটি নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।