বাসস
  ৩০ মে ২০২৫, ২৩:৪৫

হোয়াইট হাউজে ইলন মাস্কের সম্মানে ট্রাম্পের ‘বিদায় সংবর্ধনা’

ঢাকা, ৩০ মে, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইলন মাস্ককে বিদায় জানিয়েছেন। 

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ব্যয় সংকোচন বিষয়ক দপ্তর ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডগে)’র প্রধান হিসেবে মাত্র চার মাস দায়িত্ব পালনের পর মাস্ক এই পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে  ট্রাম্প ও মাস্কের একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, যেখানে ট্রাম্প এই বিদায়ের বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন।

৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প বৃহস্পতিবার তার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ মাস্কের প্রশংসা করে বলেন, ‘আজই ওর শেষ দিন, তবে আসলে নয়, কারণ ও সবসময়ই আমাদের সঙ্গে থাকবে, সর্বদা সহযোগিতা করবে।’

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ‘ডগে’র অধীনে মাস্কের কাজকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে আখ্যা দেন এবং বলেন, এই কর্মসূচি চালু থাকবে।

তবে শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনের পরিবেশ হবে ফেব্রুয়ারির সেই নাটকীয় আগমনের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন, যখন মাস্ক তাঁর ছোট সন্তানকে নিয়ে ওভাল অফিসে প্রবেশ করেন এবং স্বয়ং ট্রাম্পের চেয়েও বেশি মনোযোগ কাড়েন।

তখন মাস্ক ছিলেন ট্রাম্পের ছায়াসঙ্গী, এয়ার ফোর্স ওয়ান, মেরিন ওয়ান, হোয়াইট হাউজ এবং ট্রাম্পের ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো রিসোর্ট, সর্বত্র ছিল তার সরব উপস্থিতি।

কিন্তু এখন তিনি যাচ্ছেন হতাশা নিয়ে। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, এই ভূমিকা নিয়ে তার মধ্যে একরকম বিরক্তি জন্মেছে। পাশাপাশি তিনি প্রকাশ্যে ট্রাম্পের রাজস্ব ও ব্যয়ের পরিকল্পনার সমালোচনাও করেছেন।

ডগে’র ধ্বংসযজ্ঞ

‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ বা ডগে মাস্কের নেতৃত্বে ফেডারেল প্রশাসনের নানা দপ্তরে এক আদর্শিক রকমের খড়্গ চালিয়েছে। তরুণ ‘টেক ব্রো’দের মাধ্যমে লক্ষাধিক কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে।

এই দপ্তরের আওতায় আমেরিকার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি-ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে বৈদেশিক সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এতে বিশ্বের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বীরা লাভবান হতে পারে।

তবে বাস্তবে ডগে’র সাফল্য মাস্কের শুরুতে দেওয়া বাগাড়ম্বরের ধারেকাছেও যায়নি। তিনি ওয়াশিংটনে একটি রক্ষণশীল ইভেন্টে চেইনস্ চালিয়ে প্রবেশ করে বলেছিলেন, দুই ট্রিলিয়ন ডলার কেটে ফেলা খুবই সহজ হবে।

ট্রাম্পও জোর গলায় বলেছিলেন, ডগে ‘অপচয় কমাচ্ছে’, এবং নিয়মিত মাস্কের দলে আবিষ্কৃত দুর্নীতির ‘দীর্ঘ তালিকা’ পড়ে শোনাতেন, যার মধ্যে এমনকি পৃথিবীর সবচেয়ে বয়সী মানুষের চেয়েও বয়সী সোশ্যাল সিকিউরিটি দাবিদারদের নামও ছিল।

কিন্তু স্বাধীনভাবে পরিচালিত ‘ ডগে ট্র্যাকার’ ওয়েবসাইট অনুযায়ী এ পর্যন্ত মাত্র ১২ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে। আর ‘দ্য আটলান্টিক’ ম্যাগাজিন বলছে, প্রকৃত সাশ্রয় আরও কম, মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার।

মাস্কের ‘সিলিকন ভ্যালি’ ঘরানার ‘দ্রুত এগোও, ভেঙে ফেলো’ দর্শন ওয়াশিংটনের অনেকের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে।

তিনি মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, ট্রাম্পের সর্বশেষ ‘মেগা ট্যাক্স ও ব্যয় বিল’ তাঁকে হতাশ করেছে, কারণ এটি ডগে’র কাটছাঁট নীতিকে দুর্বল করে দেয়।

এদিকে মাস্কের নিজের ব্যবসাও ক্ষতির মুখে পড়ে।

টেসলার বিক্রি হঠাৎ কমে যায়, বিনিয়োগকারীরা মাস্ককে কাজে ফেরার আহ্বান জানান। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। স্পেস এক্স-এর কয়েকটি রকেট উৎক্ষেপণও ব্যর্থ হয়।

শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে মাস্ককে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনের ব্যাপারেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে। সেখানে বলা হয়েছে, গত নির্বাচনী প্রচারকালীন তিনি বিপুল মাত্রায় কেটামিন সেবন করতেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, এতটাই সেবন করতেন যে তা তার মূত্রথলিতেও প্রভাব ফেলেছে, যা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের একটি সুপরিচিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

মাস্ক এর আগে স্বীকার করেছেন, তিনি কেটামিন সেবন করেন এবং বলেন, এটি তাঁর ‘নেতিবাচক মানসিক অবস্থা’ মোকাবিলায় প্রেসক্রাইব করা হয়েছে। তিনি এমনও দাবি করেন, এই ওষুধ তার জন্য উপকারী হয়েছে এবং এতে টেসলার বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হয়েছেন।