শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ মে, ২০২৫ (বাসস): নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত এক বছরে বিশ্বের প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ অতিরিক্ত এক মাস তীব্র গরম সহ্য করেছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে, জীবাশ্ম জ্বালানি অব্যাহতভাবে পোড়ানোর ফলে প্রতিটি মহাদেশেই মানুষের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে উন্নয়নশীল দেশে এর ক্ষতিকর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব পাচ্ছে।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের জলবায়ু বিজ্ঞানী ও গবেষণা প্রতিবেদনের সহ-লেখক ফ্রিডেরিকে ওটো বলেছেন, ‘প্রতি ব্যারেল তেল পোড়ানো ও প্রতি টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণে তাপমাত্রা একটু একটু বাড়বে ফলে তাপপ্রবাহে আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে’।
২ জুন ‘বিশ্ব তাপ মোকাবিলা দিবস’-এর আগে বিশ্ব আবহাওয়া নিরীক্ষণ সংস্থা, ক্লাইমেট সেন্ট্রাল ও রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট ক্লাইমেট সেন্টারের বিজ্ঞানীরা গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। এই বছর দিবসটি অতিরিক্ত গরমে দুর্বলতা ও হিটস্ট্রেক ঝুঁকি নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব মূল্যায়ন করতে গবেষকরা ২০২৪ সালের ১ মে থেকে ২০২৫ সালের ১ মে পর্যন্ত সময়কে বিশ্লেষণ করেছেন।
তারা বলেছেন, ‘চরম গরম দিন’ সংজ্ঞায়িত করা হয় সেসব দিনকে যা ১৯৯১-২০২০ সালের মধ্যে কোন স্থানের তাপমাত্রার ৯০ শতাংশ দিনের চেয়ে বেশি গরম ছিল।
বিজ্ঞানীরা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত মডেলিং পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখেছেন, মানবসৃষ্ট উষ্ণায়ন না থাকলে এমন চরম গরম দিনের সংখ্যা কত হতো।
ফলাফল ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশ্বে প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ যা মোট জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশ, তারা গত এক বছরে অন্তত ৩০ দিন বেশি চরম গরম দিনের সম্মুখীন হয়েছে, যা মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন না হলে হতো না।
গবেষক দলটি পুরো বছরের মধ্যে ৬৭টি চরম গরমের ঘটনা চিহ্নিত করেছে এবং প্রতিটির পেছনেই জলবায়ু পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রভাব খুঁজে পেয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্যারিবীয় দ্বীপ আরুবা। সেখানে ১৮৭ দিন চরম গরম রেকর্ড হয়। যা পৃথিবীর স্বাভাবিক উষ্ণতায় থাকলে ৪৫ দিন কম হতো।
এই গবেষণাটি এমন এক বছরের কথা বলে, যা বৈশ্বিক উষ্ণতার দিক থেকে নজিরবিহীন। ২০২৪ সাল ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে গরম বছর, যা ২০২৩ সালকেও ছাড়িয়ে গেছে। আর ২০২৫ সালের জানুয়ারি ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গরম জানুয়ারি।
গত পাঁচ বছরের গড় হিসেব করলে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা এখন শিল্প বিপ্লবের পূর্বের সময়ের চেয়ে ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। শুধু ২০২৪ সালেই তাপমাত্রা বেড়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে যা প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে নির্ধারিত সীমার বাইরে।
প্রতিবেদনটি আরও জানায়, গরমজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।
২০২২ সালের গরমে ইউরোপে তাপজনিত রোগে ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। তবে অন্য দেশে এমন তথ্য খুবই কম। অনেক মৃত্যুর আসল কারণ হলো তাপের প্রভাব, কিন্তু তা হৃদরোগ বা ফুসফুসের সমস্যার সঙ্গে ভুলবশত জড়ানো হয়।
গবেষকরা তাপপ্রবাহ প্রতিরোধে আগাম সতর্কবার্তা, শহরভিত্তিক পরিকল্পনা ও জনসচেতনতামূলক উদ্যোগের ওপর জোর দেন।
তারা বলেন, ভবন নির্মাণে ছায়া ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা দরকার। গরমের সময় কঠোর পরিশ্রম এড়িয়ে চলতে হবে।
তবে তাদের মতে, শুধু পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়াই যথেষ্ট নয়, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বন্ধ না করলে বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়।