বাসস
  ২৮ মে ২০২৫, ২২:২৫

জার্মানিতে র্মেৎসের সঙ্গে জেলেনস্কি বৈঠক, আলোচনায় ইউক্রেন যুদ্ধ

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস): ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বুধবার জার্মানি সফর করেন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ র্মেৎসের সঙ্গে বৈঠকের জন্য, যিনি কিয়েভকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘শক্তিশালী সমর্থনের’ অঙ্গীকার করেছেন।

জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্তেফান কোরনেলিয়াসের বরাতে বার্লিন  থেকে এএফপি জানায়, বৈঠকে আলোচ্য বিষয় হবে ‘ইউক্রেনকে জার্মানির সহায়তা এবং যুদ্ধের তিন বছরেরও বেশি সময় পর রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা।’

জেলেনস্কির প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন যে, তারা র্মেৎসের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকের আগে বার্লিনে পৌঁছেছেন।

এই দুই নেতা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখনো তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় রাশিয়ার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার প্রচেষ্টাও আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

র্মেৎসের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন এবং জার্মান ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জেলেনস্কি বেলভ্যু প্রাসাদে জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

বার্লিন সফরটি এমন এক সময় হচ্ছে যখন রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর চলমান সংঘাতে সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রক্ষণশীল র্মেৎস, যিনি ৬ মে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তিনি ইউক্রেনের প্রতি জোরালো সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন এবং প্যারিস, লন্ডন ও ওয়ারশ’র সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করার কথা বলেছেন।

তিনি ইউরোপের  ‘সবচেয়ে শক্তিশালী প্রচলিত সেনাবাহিনী’  গঠনের লক্ষ্যে জার্মানির প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধিরও তাগিদ দিয়েছেন,  যে পরিকল্পনাকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বুধবার ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।

মধ্য-ডানপন্থি র্মেৎস বার্লিনে পূর্বসূরি মধ্য-বামপন্থি ওলাফ শোলৎজের চেয়ে ভিন্ন কণ্ঠস্বর এনে দিয়েছেন এবং পুতিনকে তীব্র সমালোচনার শিকার করেছেন। চ্যান্সেলর হিসেবে তিনি সম্প্রতি বলেন, ‘পুতিন স্পষ্টত আলোচনার প্রস্তাবকে দুর্বলতার নিদর্শন মনে করেন।’

শোলৎজও কিয়েভকে শক্তভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন, তবে তিনি দীর্ঘপাল্লার টাউরাস ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাতে সংকোচ বোধ করেন, কারণ এতে রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন।

র্মেৎস অতীতে টাউরাস সরবরাহের পক্ষে মত দিয়েছিলেন, তবে তার নতুন সরকার এখন বলেছে, তারা ইউক্রেনে ঠিক কী অস্ত্র পাঠানো হচ্ছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবে না—‘কৌশলগত অস্পষ্টতা’র অবস্থান গ্রহণ করবে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসনের ফলে দেশটির পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। এই মাসের শুরুতে তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো রুশ ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা সরাসরি আলোচনা করেছেন।

তবে পুতিনকে আলোচনায় বিলম্ব ঘটানোর অভিযোগ করা হচ্ছে এবং ক্রেমলিন এখনো তাদের ‘সর্বোচ্চ দাবি’ থেকে সরে আসার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।

যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি বহুদিন ধরেই দিয়ে আসা ট্রাম্প গত রোববার এক বিরল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে পুতিনের সমালোচনা করেন: ‘আমি সবসময়ই রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক রেখেছি, কিন্তু তার কিছু একটা হয়েছে। সে পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে!’

মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, পুতিন ‘আগুন নিয়ে খেলছে’, একই দিনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং সিএনএন জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন চলতি সপ্তাহেই নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিতে পারে।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ওয়াডেফুল বুধবার ওয়াশিংটনে বৈঠক করার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, এই আলোচনায় গুরুত্ব পাবে ‘আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য: আমরা ইউক্রেনে প্রাণহানি বন্ধ করতে চাই, আমরা তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি চাই, এবং আমরা একটি স্থায়ী শান্তি চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুতিনকে যেন অবশেষে আলোচনার টেবিলে আনা যায়, রাশিয়াকে যেন অবশেষে গঠনমূলক আলোচনায় বাধ্য করা যায়—এই জন্য আমাদের চাপ বজায় রাখতে হবে।’ ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করার দিকেই ইঙ্গিত দেন তিনি।