শিরোনাম

ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ভেনিজুয়েলার তেলবাহী জাহাজে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবরোধের ফলে দেশটির তেল উৎপাদন ও রপ্তানি আয় অর্ধেকে নেমে যেতে পারে। এতে দেশটির ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি আরও গভীর সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কারাকাস থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মঙ্গলবার ভেনিজুয়েলার ওপর ‘পূর্ণাঙ্গ ও সর্বাত্মক অবরোধের’ ঘোষণা দেন। এর ফলে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত তেলবাহী জাহাজগুলো আর ব্যবহার করতে পারবে না ভেনেজুয়েলা।
এটিকে ভেনিজুয়েলার নেতা নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে ট্রাম্পের একটি বড় ধরনের পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল নিকোলাস মাদুরোর সাম্প্রতিক দুই নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছে।
গত সেপ্টেম্বর থেকে ক্যারেবিয়ান সাগরে বিশাল নৌবহর মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মাদক চোরাচালান বিরোধী অভিযানের নামে তারা এ পর্যন্ত বেশ কিছু নৌকায় হামলাও চালিয়েছে। এতে জেলেসহ অন্তত ৯৫ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ভেনিজুয়েলা সরকার ও নিহতদের পরিবার।
মাদুরোর অভিযোগ, মাদকবিরোধী অভিযানের নাম করে আসলে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং ভেনিজুয়েলার তেল ‘চুরি’ করার পরিকল্পনা করছে ওয়াশিংটন।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কয়েক বছর ধরে চীনসহ বিভিন্ন দেশের কাছে গোপনে কম দামে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করে আসছিল ভেনিজুয়েলা। ট্রাম্পের দাবি, এই অর্থ মাদক, সন্ত্রাস, মানবপাচার ও হত্যার মতো কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ওপেক-এর তথ্যমতে, ভেনিজুয়েলার প্রায় ৩০ হাজার ৩০০ কোটি ব্যারেল তেলের মজুদ রয়েছে, যা বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। কিন্তু অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে ২০০০ সালের শুরুতে যেখানে প্রতিদিন ৩০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদিত হতো, ২০২০ সালে তা নেমে আসে মাত্র সাড়ে ৩ লাখে। অবশ্য, বর্তমানে তা বেড়ে দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেলে দাঁড়িয়েছে।
মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বেকার ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ ফ্রান্সিসকো মোনালদি জানান, নতুন অবরোধের আগে ভেনিজুয়েলা বিশ্ববাজারের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম দামে তেল বিক্রি করতো।
এদিকে ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ দাবি করেছে, তাদের রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে এবং তেলবাহী জাহাজগুলো নিরাপদেই চলাচল করছে।
তবে গত সপ্তাহে ‘এমটি স্কিপার’ নামে একটি তেলবাহী জাহাজ মার্কিন সামরিক বাহিনী জব্দ করেছে। এতে ১০ লাখ ব্যারেলের বেশি তেল ছিল।
মার্কিন অবরোধের কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কিছুটা বাড়লেও, ভেনিজুয়েলা এখন আরও সস্তায় তেল বিক্রি করতে বাধ্য হবে। মোনালদি মনে করেন, এই কড়াকড়ির ফলে অনেক জাহাজই আর ভেনিজুয়েলায় আসতে চাইবে না। ফলে দেশটির রপ্তানি অন্তত অর্ধেক কমে যেতে পারে।
পিডিভিএসএ’র তেলের মজুদ রাখার ক্ষমতা মাত্র ১৫ দিনের। রপ্তানি বন্ধ থাকলে তাদের তেল উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে দৈনিক উৎপাদন ৪ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
ট্রাম্পের এই নির্দেশ এখনও মার্কিন কোম্পানি শেভরনের ওপর কার্যকর হয়নি। তারা বিশেষ লাইসেন্সের অধীনে ভেনিজুয়েলায় তেল উত্তোলন করছে। শেভরন দেশটির উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে তারা সরকারকে অর্থ দিতে পারে না। কর ও অন্যান্য পাওনা তেলেই পরিশোধ করতে হয়। এতে ভেনেজুয়েলা আরও ডলারের সংকটে পড়ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এশিয়ার দেশগুলোতে রপ্তানি কমে গেলে ভেনিজুয়েলা বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব হারাবে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চীন, কারণ ভেনিজুয়েলার মোট তেলের ৮০ শতাংশই কেনে তারা।
সংক্ষেপে, যুক্তরাষ্ট্রের এই কঠোর অবস্থান ভেনিজুয়েলার অর্থনীতির শেষ ভরসাটুকুও তছনছ করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।