বাসস
  ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৪৪

জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন রাব্বি

নারায়ণগঞ্জ, ২৬ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : মাহফুজুর রহমান রাব্বি, দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। পারফরমেন্সের ভিত্তিতে বাংলাদেশ এ’ দলে জায়গা করে নিলেও ২০ বছর বয়সী রাব্বির স্বপ্ন জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করা। 

মাত্র ছয় বছর বয়সে খেলার মাঠে বড় ভাই মেহেদীকে দেখেই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ জমে রাব্বির। বিকেল হলেই ভাইয়ের সাথে চলে যেতেন মাঠে, সেই থেকে শুরু। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাননি রাব্বি। বয়স ভিত্তিক পর্যায় পেরিয়ে এখন বাংলাদেশ ‘এ’ দলে জায়গা পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জের উদীয়মান ক্রিকেটার মাহফুজুর রহমান রাব্বি। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে তার। ব্যাটিং-বোলিংয়ে  স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিত এই খেলোয়ার ২০২৩ সালের অনুষ্ঠিত যুব এশিয়া কাপে নেতৃত্ব দেন। মাহফুজুর রহমান রাব্বির নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো যুব এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জণ করেছিল। 

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ইসদাইর এলাকায় বাসস’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রতিভাবান এই ক্রিকেটার জানান ক্রিকেটের যাত্রায় তার অনুপ্রেরণার কথা।  

রাব্বি বলেন, ক্রিকেটে আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল বড় ভাইকে দেখে। আমরা তিন ভাই, সবার ছোট আমি। ছোটবেলায় বড় ভাইয়ের  সাথে মাঠে যেতাম, খেলা দেখতাম। ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবল, ব্যাডমিন্টন খেললেও সেসব খেলা আমাকে সেভাবে টানত না। ক্রিকেটের প্রতি আমার আগ্রহ বেশি দেখে ভাইয়া আমাকে নারায়ণগঞ্জের ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করে দেয়। তখন আমার বয়স ছিল ১২ বছর।

সোনারগাঁও কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র রাব্বি। পরিবার পরিজন নিয়ে সদর উপজেলার ইসদাইরে বাস করেন।  বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অধিকাংশ খেলোয়াড়েরই শুরুটা হয় নানা বিধি-নিষেধের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এদিক থেকে রাব্বি ব্যতিক্রম। ছোটবেলা থেকে পরিবারের সবটুকু সমর্থন পেয়েছেন রাব্বি। অনুশীলনে অবহেলা করলে বরং তার বাবা-মায়ের শাসনের সম্মুখীন হয়েছেন। 

রাব্বি বলেন, বড় ভাইয়ার সাথে অনুশীলন করতে করতেই ক্রিকেটের প্রতি ভালোলাগা তৈরি হয়। সেই থেকে শুরু, ছোটবেলা ভাইয়া নিয়মিত অনুশীলনে নিয়ে যেত। অনুশীলনে গাফিলতি দেখলে শাসনও করতেন। 

রাব্বি যখন ক্রিকেটে নিজের স্বপ্ন দেখা শুরু করেন ঠিক তখনই জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন। ২০২০ সালে ঘরের একমাত্র উপার্জনকারী তার বাবা মোতায়ের রহমান রাজু মারা যান। তিনি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব পালনের কথা ভেবে খেলা ছেড়ে চাকরি করার চিন্তা করেন রাব্বি। কিন্তু বড় ভাই মেহেদী গার্মেন্টেসে চাকরি নিয়ে সংসারের হাল ধরেন। 

রাব্বি বলেন, আমার পাশে আমার বড় ভাই না থাকলে আমি কখনোই এতদূর এগিয়ে আসতে পারতাম না। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। করোনা পরিস্থিতিতে কোন খেলাও হচ্ছিল না। সেসময়ে মনে হয়েছে সংসারের হাল ধরতে ভাইদের সহায়তা করি, খেলাটা আর  হবে না।  কিন্তু আমার বড় ভাইরা সেটা করতে দেয়নি। তারা খেলার মাঠে আরো মনোযোগ দিতে বলেছেন। পরিবারের প্রেরণাতেই আমি আজ এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি। কিন্তু আক্ষেপ এতোটুকু বাবা আমার সাথে নেই। আন্তজার্তিক ম্যাচে গ্যালারিতে বসে বাবা আমার খেলা দেখবেন, সেই স্বপ্নটা পূরণ হলো না।

জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা পোষণ করে রাব্বি বলেন, ‘পুরো পরিবার আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। তাদের আশা পূরণ করতে চাই, জাতীয় দলের হয়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করাই এখন আমার মূল লক্ষ্য।’ 

নিজের অনুপ্রেরণার কথা উল্লেখ করে রাব্বি বলেন, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ভক্ত আমি। তার খেলা দেখে দেখেই বড় হয়েছি। ক্রিকেট খেলায় সাকিব ভাই আমার আইডল। 

অনূর্ধ্ব-১৫ দলের ব্যাটিং কোচ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাব্বি ছোট বেলায় ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হয়। সে সব সময়ই ক্রিকেটে নিজের দক্ষতার প্রমান রেখেছে। যেমন পরিশ্রমী, তেমনই উদ্যোমী। ভবিষ্যতে সে জাতীয় দলেও খেলতে পারবে বলে আশা করছি।