বাসস
  ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৯

পিএফএম সংস্কার কৌশল ২০২৫-২০৩০ উন্মোচন করেছে অর্থ বিভাগ

অর্থ বিভাগ বুধবার তৃতীয় পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট (পিএফএম) সংস্কার কৌশল ২০২৫-২০৩০ উন্মোচন করেছে। ছবি : বাসস

ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : অর্থ বিভাগ আজ তৃতীয় পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট (পিএফএম) সংস্কার কৌশল ২০২৫-২০৩০ উন্মোচন করেছে। 

এতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার, সুস্পষ্ট ফলাফল নির্ধারণ, জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং সেবা প্রদান উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে পিএফএম সংস্কার কৌশল উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সচিব, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, সাংবিধানিক সংস্থার প্রধান এবং উন্নয়ন সহযোগীরা উপস্থিত ছিলেন।

এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং বাড়তে থাকা সরকারি ব্যয়ের চাপে থাকা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই নতুন কাঠামো রাজস্ব শৃঙ্খলা জোরদার, বাড়তে থাকা সরকারি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত রূপরেখা প্রদান করবে।

পিএফএম সংস্কার কৌশল ২০২৫-২০৩০ উদ্বোধনকালে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা সাধারণ মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। দীর্ঘদিন প্রত্যাশিত এই পিএফএম কৌশল স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং উন্নত মানের সরকারি সেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি সামনে এনেছে।

তিনি অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (ওসিএজি) এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তাদের কৌশলটির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান। 

একই সঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, শক্তিশালী শাসনব্যবস্থা ও আরো স্বচ্ছ সরকারি আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য, যা নাগরিকদের জন্য বাস্তব সুফল বয়ে আনবে।

অর্থ বিভাগের মাল্টিপারপাস হলে স্ট্রেংথেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম টু এনেবল সার্ভিস ডেলিভারি (এসপিএফএমএস)-এর আওতায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নুরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেসমে।

এসপিএফএমএস-এর জাতীয় কর্মসূচি পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১) ড. জিয়াউল আবেদীন স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এছাড়া, বিশ্বব্যাংকের লিড গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট সুরাইয়া জান্নাতও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

অর্থ সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার তার বক্তব্যে বলেন, পিএফএম সংস্কার কৌশল ২০২৫-২০৩০ দীর্ঘ সময় ধরে বহু অংশীজনের নিরলস ও সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল।

তিনি বলেন, অর্থ বিভাগ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সাংবিধানিক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী এবং কারিগরি বিশেষজ্ঞদের অবদান আমি আন্তরিকভাবে স্বীকার করছি, যারা এই সমন্বিত ও দূরদর্শী কৌশল প্রণয়নে কাজ করেছেন।

জবাবদিহির গুরুত্ব তুলে ধরে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, পিএফএম সংস্কার যাত্রার মূল লক্ষ্য হলো— রাজস্ব শৃঙ্খলা অর্জন, আর্থিক প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন এবং আর্থিক শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করা, যাতে আরো দক্ষ, স্বচ্ছ ও নাগরিককেন্দ্রিক সরকারি আর্থিক সেবা নিশ্চিত করা যায়।

তিনি বলেন, শক্তিশালী ও স্বাধীন নিরীক্ষা ব্যবস্থার সহায়তায় একটি কার্যকর পিএফএম ব্যবস্থা সংস্কার কর্মসূচির সাফল্য নিশ্চিত করতে অপরিহার্য।

বিশ্বব্যাংক বিভাগের পরিচালক জ্যঁ পেসমে বলেন, পেনশন ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনের মতো সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, যা সরকারি সম্পদের ব্যবহারে বিশ্বাসযোগ্যতা, তদারকি ও স্বচ্ছতা জোরদার করেছে।

তবে তিনি উল্লেখ করেন, এসব অর্জনের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং সরকারি ঋণ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক মান, শাসনব্যবস্থা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা টেকসই প্রকল্প, কার্যকর তদারকি এবং দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সংবাদ বিবৃতিতে জানানো হয়, ২০২৫-২০৩০ কাঠামোটি ১৫টি সংস্কার স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার মধ্যে রয়েছে আর্থিক স্থিতিশীলতা, রাজস্ব আহরণ, সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা, ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা, ক্রয়ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ ও বহিঃতদারকি, ডিজিটাল রূপান্তর এবং সক্ষমতা উন্নয়ন।

প্রথমবারের মতো এই কৌশলে জলবায়ু-স্মার্ট পিএফএম, জেন্ডার-সংবেদনশীল বাজেট এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংস্কার পূর্ণাঙ্গভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কৌশলটির একটি কেন্দ্রীয় বিষয় হলো স্থিতিস্থাপকতা। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত অঞ্চলটির মধ্যে অন্যতম নিম্ন হওয়া এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের দায় ও সম্ভাব্য ঝুঁকির মাধ্যমে আর্থিক ঝুঁকি বাড়তে থাকায়, নথিতে উন্নত ম্যাক্রো-ফিসকাল পূর্বাভাস, সমন্বিত ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক ঝুঁকির স্বচ্ছ প্রতিবেদনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

কৌশলটি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও বাস্তবায়নের ওপরও জোর দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে— পরবর্তী সংস্কার পর্যায়ের সফলতা নির্ভর করবে ধারাবাহিক রাজনৈতিক অঙ্গীকার, সংস্থাসমূহের মধ্যে শক্তিশালী সমন্বয় এবং সরকারি খাতের সক্ষমতায় অব্যাহত বিনিয়োগের ওপর।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের পথে অগ্রসর হওয়ার প্রেক্ষাপটে নতুন পিএফএম সংস্কার কৌশল সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনাকে কেবল একটি কারিগরি কার্যক্রম নয়, বরং অর্থনৈতিক শাসন, সমতা এবং জনআস্থার একটি মূল ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।