শিরোনাম
ঢাকা, ১৩ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং আর্থিক ও ব্যাংক খাতকে আরও শক্তিশালী করা সরকারের অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের মধ্যে অন্যতম উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি ‘কল্যাণমুখী’ রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘সরকারের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে একটি ‘কল্যাণমুখী’ রাষ্ট্রে পরিণত করা। এর অর্থ শুধু খাদ্য সহায়তা দেওয়া বা সড়ক নির্মাণ নয় বরং নিরাপত্তা, পেনশন, কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্যসহ বিস্তৃত ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা।’
আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ের অর্থ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ‘ইউপেনশন অ্যাপ’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা এ সব কথা বলেন।
অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে অগ্রাধিকার হলো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, আর্থিক ও ব্যাংক খাতকে আরও শক্তিশালী করা এবং পুঁজিবাজারকে উন্নত করা। এছাড়া বীমা খাতে কিছু সমস্যা রয়েছে, যা সমাধান করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুইটি পৃথক বিভাগে রূপান্তরিত হবে। ‘আমরা এটা করব।’
পেনশন স্কিম নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এটা খুব ভালো উদ্যোগ। আমরা চেষ্টা করব যেসব সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন সেগুলো দ্রুত সমাধান করতে এবং অবশ্যই সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে যে তারা এসব স্কিম থেকে উপকৃত হবেন।’
তিনি বলেন, এটা হয়তো ছোট পদক্ষেপ, কিন্তু একদিন এর সুফল মিলবে।
অ্যাপ উদ্বোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পেনশন কর্তৃপক্ষ এই অ্যাপ চালু করে ভালো কাজ করেছে। এটিকে আরও ব্যবহার বান্ধব করতে হবে, যাতে পেনশনভোগীদের সুবিধা হয়।’
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো (বিএসডব্লিউ) চালুর ফলে ব্যবসায়ীদের আর বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে লাইসেন্স ও সনদ নিতে হয় না, বরং এক প্ল্যাটফর্ম থেকেই এসব সুবিধা পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, বড় সেতুর মতো বৃহৎ অবকাঠামোগত কাজের পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও উন্নয়ন প্রয়োজন। যাতে মানুষের জীবনে স্বস্তি আসে, এ ধরনের উন্নয়নও মানুষের জীবনকে ছুঁয়ে যায়।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যথাসাধ্য এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি এবং আমরা খারাপ অবস্থায় নেই। ‘ইউপেনশন অ্যাপ’ চালু হওয়া একটি অগ্রগতির ধাপ।’
কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দক্ষতা উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, শিল্প ও একাডেমিয়ার মধ্যে সম্পর্ক এখানে অনেক কম। আমরা প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় আনার চেষ্টা করছি।’
তিনি অভিযোগ করেন, দেশের ব্যবসায়ীরা গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে চান না, অথচ সবাই যখন সরকারের ওপর নির্ভরশীল হয় তখন সরকারের পক্ষে সবকিছু করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তবে এটি একটি ইতিবাচক বিষয় হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তার মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে। পরবর্তী নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেব।’
অনুষ্ঠানে অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, সরকার প্রজাতন্ত্রের সব সরকারি কর্মচারীকে সার্বজনীন পেনশন স্কিম (ইউপিএস) এর আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। ভারতেও একই ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালে এই ব্যবস্থা চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ এই স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
যে কেউ www.upension.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে সহজেই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে স্বয়ংক্রিয় নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারবেন এবং অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড/ডেবিট কার্ড ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এর মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমগুলো হলো: (১) প্রবাস (২) প্রগতি (৩) সুরক্ষা এবং (৪) সমতা।