বাসস
  ১৯ জুন ২০২৫, ১৪:৩৭

নিপ্পন ও ইউএসস্টিলের অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পন্ন

ঢাকা, ১৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : জাপানি প্রতিষ্ঠান নিপ্পন স্টিল ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইউএস স্টিল বুধবার আলোচিত অংশীদারিত¦ চুক্তি সম্পন্ন করেছে। এর আওতায় মার্কিন সরকারকে একটি ‘গোল্ডেন শেয়ার’ দেওয়া হয়েছে। যে শেয়ারের মাধ্যমে জাপানি কোম্পানিটির কৌশলগত সিদ্ধান্তে আপত্তি তোলার অধিকার অর্থাৎ ভেটো দিতে পারবে ওয়াশিংটন।

নিউ ইয়র্ক থেকে এএফপি জানায়, চুক্তিটি মূলত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ঘোষিত অধিগ্রহণ পরিকল্পনার সংশোধিত রূপ। সেসময় ১৪৯ কোটি ডলারের ইউএস স্টিল কিনতে সম্মত হয়েছিলো  নিপ্পন স্টিল।

কিন্তু ঐতিহ্যবাহী মার্কিন এ কোম্পানিটিকে পুরোপুরি কিনে নেওয়ার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে রাজনৈতিক মতবিরোধ তৈরি করে, যার মধ্যে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।

২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারেও ট্রাম্প প্রস্তাবিত এই চুক্তির তীব্র সমালোচনা করেন। যদিও গত মাসে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে সংশোধিত উদ্যোগটিকে ‘পরিকল্পিত অংশীদারিত্ব’ হিসেবে অভিহিত করেন।

চূড়ান্ত চুক্তির আওতায় গোল্ডেন শেয়ারের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন এখন নিপ্পনের অবকাঠামোগত পরিকল্পনা ও কর্মসংস্থান নীতিতে মতামত দেওয়ার ক্ষমতা রাখবে।


টোকিওতে নিপ্পন স্টিলের প্রধান নির্বাহী ইজি হাশিমোতো বৃহস্পতিবার বলেন, এই চুক্তি আমাদের পরিকল্পিত কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না।

কোম্পানি দুটি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে স্বাক্ষরিত জাতীয় নিরাপত্তা চুক্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৮ সালের মধ্যে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের নতুন বিনিয়োগ করা হবে।

হাশিমোতো সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই চুক্তি আমাদের জন্য পুরোপুরি সন্তোষজনক, কারণ এটি ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনার স্বাধীনতা ও ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে।’

তিনি আরো বলেন,  ‘আমরা যত দ্রুত সম্ভব পুনর্গঠন ও উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করতে চাই। পাশপাশি ‘চাকরি ও উৎপাদন কেন্দ্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে না’ বলেও প্রতিশ্রুতি দেন।

চুক্তির খবরে বৃহস্পতিবার সকালে নিপ্পন স্টিলের শেয়ারমূল্য ৪.৬ শতাংশ বেড়ে যায়। যদিও টোকিওর প্রধান নিকেই সূচক ০.৭ শতাংশ কমেছে। 
পেনসিলভানিয়ার রিপাবলিকান সিনেটর ডেভ ম্যাককর্মিক এ বিষয়ে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ পোস্ট করেন। তিনি লেখেন, ‘মন ভ্যালির কর্মজীবী পরিবার, আমাদের অর্থনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা এবং আমেরিকার উৎপাদনশীল ভবিষ্যতের জন্য এটি এক বিশাল বিজয়’।

তবে, এই চুক্তির প্রবল বিরোধিতা করা ইউনাইটেড স্টিল ওয়ার্কাস ইউনিয়ন বিবৃতিতে জানিয়েছে, আমরা নিপ্পনের প্রতিশ্রুতি পালন নিশ্চিত করতে নজরদারি অব্যাহত রাখবে এবং বৈশ্বিক কর্পোরেশনগুলোর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র ‘সম্মিলিত দরকষাকষি’ ব্যবহার করব।

বিশ্বমানের সক্ষমতা :

২০২৩ সালের ডিসেম্বরের প্রাথমিক চুক্তিতে নিপ্পন ইউএস স্টিলের প্রতি শেয়ারের জন্য ৫৫ ডলার নগদ মূল্য দেওয়ার প্রস্তাব দেয়, যা বাজার মূল্যের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি ছিল। কোম্পানির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এ চুক্তির মাধ্যমে তারা ‘বিশ্বসেরা সক্ষমতা সম্পন্ন একটি স্টিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
তবে ইউএসডব্লিউ ইউনিয়ন, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ওহাইওর সাবেক সিনেটর ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল চুক্তির প্রবল বিরোধিতা করে। ফলে মাসের পর মাস অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় চুক্তিটি। পরবর্তীতে নিপ্পন ওয়াশিংটন এবং পিটসবার্গে তাদের লবিং তৎপরতা জোরদার করে।

২০২৫ সালের জানুয়ারিরতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিদায় নেওয়ার আগে চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করে দেন। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় স্টিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিদেশি মালিকানায় গেলে তা জাতীয় নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ চেইনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে যুক্তি দেখান তিনি।

তবে কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর রাজনৈতিক পরিবেশ বদলে যাওয়ায় চুক্তির পক্ষে থাকা পক্ষগুলো নতুন করে আশাবাদী হয়ে ওঠেন।

সংশোধিত চুক্তিতে ইউএস স্টিলের সদর দপ্তর পিটসবার্গেই থাকবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন অব্যাহত রাখা হবে। এ ছাড়াও জাতীয় নিরাপত্তা চুক্তি অনুযায়ী, ইউএস স্টিলের পরিচালনা পর্ষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য এবং সিইওসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা মার্কিন নাগরিক হবেন।

গোল্ডেন শেয়ারের মাধ্যমে মার্কিন সরকার এক জন স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ করতে পারবে। এছাড়াও  এবং বাজেট কর্তন, বিদেশে কার্যক্রম স্থানান্তর বা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অধিগ্রহণের মতো সিদ্ধান্তে সরকারের অনুমতি প্রয়োজন হবে। 

তবে এই ‘গোল্ডেন শেয়ার’ যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে কোম্পানির লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড পাওয়ার অধিকার দেবে না। এছাড়াও কোম্পানিতে কোনো ধরনের বিনিয়োগ করার বাধ্যবাধকতাও থাকবে না ওয়াশিংটনের।