শিরোনাম
ঢাকা, ১ জুন, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে শুধু পরিমাণগত নয়, গুণগত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরীয় রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক।
আজ রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘কোরিয়-বাংলাদেশ বিনিয়োগ সেমিনার’-এ দেওয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের উচিত শুধু প্রবৃদ্ধির পরিমাণ নয়, গুণমানের দিকেও নজর দেওয়া।’
বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে শুল্ক কাঠামো সংস্কার, ভিসা নীতির সহজীকরণ এবং কাস্টমস প্রক্রিয়ায় সংশোধনের ওপর জোর দেন তিনি।
পার্ক বলেন, ‘যদি দেশের উৎপাদন খরচ আমদানি পণ্যের তুলনায় বেশি থাকে, তবে আর বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় না।’
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) আয়োজিত এ সেমিনারে দুই দেশের নীতিনির্ধারক ও উদ্যোক্তারা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। এফআইসিসিআই-এর সহ-সভাপতি ইয়াসির আজমান এবং নির্বাহী পরিচালক নুরুল কবির যৌথভাবে সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন।
রাষ্ট্রদূত পার্ক কোরিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ‘গত ৫০ বছরে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে তৈরি পোশাক খাতের সহযোগিতা।’ এ খাতে কোরীয় কোম্পানিগুলোর অবদান বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তিনি।
তাার ভাষায়, ‘কোরিয়া ভারত, চীন বা যুক্তরাষ্ট্র নয়; আমাদের কোনো ভূরাজনৈতিক স্বার্থ নেই, আমরা কেবল অর্থনৈতিক সহযোগিতায় আগ্রহী।’
রাষ্ট্রদূত জানান, দুই দেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে, যা আগামী ৫০ বছরে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এই চুক্তিকে তিনি ‘ইঞ্জিন’ হিসেবে অভিহিত করেন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতির প্রশংসা করে পার্ক বলেন, গত এক দশকে দেশের মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়েছে, যা উন্নয়ন সম্ভাবনারই ইঙ্গিত দেয়। তবে এলডিসি-পরবর্তী যুগে নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে, যা মোকাবিলায় সরকার ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) এর নিম্নহার নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত। তার মতে, দেশের এফডিআই-টু-জিডিপি অনুপাত মাত্র ০.৭৫ শতাংশ, যেখানে ভারতে তা ১.৭ শতাংশ এবং ভিয়েতনামে ৪.৭ শতাংশ। এই ব্যবধান কমাতে হলে অবকাঠামো ও নীতিমালার সংস্কার জরুরি বলেও মত দেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত পার্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় এফআইসিসিআইকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পক্ষে সংগঠনটির ভূমিকার প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, এ সেমিনারটি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট’-এর ধারাবাহিকতায় আয়োজন করা হয়, যা রাষ্ট্রদূতের মতে, বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।