শিরোনাম
ঢাকা, ৩১ মে, ২০২৫ (বাসস): বাণিজ্য যুদ্ধের সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির শুল্ক হার দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার তিনি এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকেই এ শুল্কহার বাস্তবায়ন করা হবে।
ওয়েস্ট মিফলিন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এএফপি জানিয়েছে, ট্রাম্প তার গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী রাজ্য পেনসিলভানিয়ায় একটি ইউএস একটি ইস্পাত কারখানার শ্রমিকদের (যারা গত বছর তার বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল) উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত আমদানির ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে নিয়ে যাচ্ছি। এটা কেউ এড়াতে পারবে না।
পরবর্তীতে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া এক পোস্টে লেখেন, অ্যালুমিনিয়ামের ওপরেও একই হারে শুল্ক প্রযোজ্য হবে এবং এটি বুধবার, ৪ জুন থেকে কার্যকর হবে।
জানুয়ারিতে পুনরায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয়ের ওপরই ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছেন। যা বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছে এবং আর্থিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
তিনি নির্দিষ্ট কিছু খাত যেমন গাড়ি শিল্পের ওপরও আলাদা শুল্ক আরোপ করেছেন।
শুক্রবার তিনি তার বাণিজ্য নীতির পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, শুল্ক দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকে রক্ষা করবেন।
তিনি আরও বলেন, তার প্রথম মেয়াদে যদি ইস্পাত আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ না করতেন, তাহলে যে ইস্পাত কারখানাটিতে তিনি বক্তব্য দিচ্ছিলেন সেটি টিকে থাকত না।
শুক্রবার, ট্রাম্প ইউএস স্টিল ও জাপানের নিপ্পন স্টিলের মধ্যে একটি পরিকল্পিত অংশীদারিত্বের কথা তুলে ধরেন। তবে দ্বিদলীয় বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়া এই চুক্তি নিয়ে নতুন করে খুব বেশি তথ্য দেননি ।
তিনি জোর দিয়ে বলেন যে আমেরিকান ইস্পাত প্রস্তুতকারক এবং নিপ্পন স্টিলের মধ্যে সম্প্রতি ঘোষিত পরিকল্পিত অংশীদারিত্ব সত্ত্বেও ইউএস স্টিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।
তিনি আরও আশ্বাস দিয়ে বলেন যে কোম্পানি কর্তৃক কোনও ছাঁটাই বা চাকরি আউটসোর্সিং করা হবে না।
শুক্রবার গভীর রাতে ওয়াশিংটনে ফিরে এসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন বলেন যে তিনি এখনও চুক্তিটি অনুমোদন করেননি। তবে নিপ্পনের সাথে চূড়ান্ত চুক্তিটি আমাকে অনুমোদন করতে হবে। যদিও আমরা এখনও সেই চূড়ান্ত চুক্তিটি দেখিনি কিন্তু তারা একটি খুব বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ।
গত সপ্তাহে, ট্রাম্প বলেছিলেন যে ইউএস স্টিল আমেরিকাতেই থাকবে এবং এর সদর দপ্তর পিটসবার্গে থাকবে। তিনি আরও যোগ করেছেন যে নিপ্পনের সাথে চুক্তিটি কমপক্ষে ৭০হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং মার্কিন অর্থনীতিতে ১৪ বিলিয়ন ডলার যোগ করবে।
পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প আরও বলেন, নিপ্পন তাদের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে মন ভ্যালি ওয়ার্কস-আয়ারভিন প্ল্যান্টে স্টিল উৎপাদন বাড়াতে ২.২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
আরও ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে স্টিল মিল আধুনিকায়ন, আকরিক খনন সম্প্রসারণ এবং ইন্ডিয়ানা ও মিনেসোটাসহ বিভিন্ন স্থানে নতুন সুবিধা নির্মাণে।
ইউএস স্টিলকে ১৪.৯ বিলিয়ন ডলারে নিপ্পন স্টিলের কাছে বিক্রির প্রস্তাব আগেই দুই দলের রাজনীতিকদের বিরোধিতার মুখে পড়েছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পদত্যাগের আগে জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে চুক্তিটি আটকে দেন।
নতুন অংশীদারিত্ব নিয়ে এখনো উদ্বেগ রয়ে গেছে:
ট্রাম্পের বক্তব্যের পরে ইউএস স্টিলের হাজার হাজার আউটসোসিং কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব কারী ইউনাইটেড স্টিলওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (ইউএসডাব্লিউ) বলেছে, নিপ্পন স্টিল বা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাদের কোনো আলোচনা হয়নি বা তাদের পরামর্শও চাওয়া হয়নি।
ইউএসডাব্লিউ’র আন্তর্জাতিক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যাককল এক বিবৃতিতে বলেন, পরিকল্পিত অংশীদারিত্বের’ অর্থ কী, তা আমরা কল্পনা করতে পারি না।
যেভাবেই চুক্তির কাঠামো হোক, আমাদের প্রধান উদ্বেগ থাকবে ইউএস স্টিলের একটি বিদেশি প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে একীভূত হওয়ার ফলে জাতীয় নিরাপত্তা, আমাদের সদস্য এবং আমাদের কর্মস্থল এলাকাগুলোর ওপর কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প নিপ্পন স্টিলের অধিগ্রহণ পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু প্রসিডেন্ট পদে ফিরে আসার পর থেকে তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলছিলেন যে তিনি কোনও না কোনও ধরণের বিনিয়োগে ইতিবাচক সাড়া দিবেন।