শিরোনাম
ঢাকা, ২৬ মে, ২০২৫ (বাসস): রাজধানীতে আয়োজিত আজ এক সেমিনারে বক্তারা দেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা উন্মোচনের জন্য অর্থনৈতিক করিডোরে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গতিপথ পরিবর্তন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, আঞ্চলিকভাবে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য অর্থনৈতিক করিডোর উন্নয়ন এবং লজিস্টিক আধুনিকীকরণকে এগিয়ে নেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসি-বাংলাদেশ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে অর্থনৈতিক করিডোর ও লজিস্টিকস উন্নয়ন : বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথি পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক করিডোর শুধু দেশের জন্য নয়, প্রতিবেশী বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্যও উপকার বয়ে আনবে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হওয়ায় নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া যাবে না, আগের সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলোতেই বরাদ্দ দেওয়া হবে।
সভাপতির বক্তব্যে আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অর্থনৈতিক করিডোর এখন আর কেবল কল্পনা নয়, বরং বাস্তব, প্রমাণ ভিত্তিক এবং জরুরি বিষয়।’ তিনি জানান, এই করিডোর বাস্তবায়ন করা হলে ২০২০ সালে যেখানে এই অঞ্চলের আউটপুট ছিল ৩২ বিলিয়ন ডলার, তা ২০৫০ সালে গিয়ে দাঁড়াতে পারে ২৮৬ বিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রায় ৭১.৮ মিলিয়ন।
তিনি বলেন, শুল্ক প্রক্রিয়ার ডিজিটাল রূপান্তর, নীতিগত সংস্কার ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের এখনই এক বা দুটি খাতকে (যেমন ওষুধ শিল্প ও ইলেকট্রনিকস) অগ্রাধিকার দিয়ে রপ্তানি বহুমুখীকরণে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশে এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি হো ইউন জিওং বলেন, বাংলাদেশের লজিস্টিক খাতে অবকাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে, যেমন সড়কপথের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা, যানজট, খরচ বেশি হওয়া এবং মাল্টিমোডাল পরিবহনের ঘাটতি। এগুলো রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য বড় বাধা। তাই করিডোর উন্নয়নের পাশাপাশি লজিস্টিকস খাতের আধুনিকায়নও জরুরি।
প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এডিবির সিনিয়র ইকোনমিকস অফিসার বরুণ কুমার দে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ও ভবিষ্যৎ কৌশল তুলে ধরেন।
এছাড়াও, সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন, এডিবির পরিবহন বিশেষজ্ঞ মো. নজরুল ইসলাম এবং সাবেক পরিচালক সব্যসাচী মিত্র। তারা অর্থনৈতিক করিডোর, লজিস্টিক হাব এবং বেসরকারি বিনিয়োগের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।
পরবর্তীতে একটি প্যানেল আলোচনায় এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মো. মাহবুব উর রহমান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, অ্যামচ্যামের সভাপতি ও এক্সপিডিটরস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের এমডি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ, আইসিসি বাংলাদেশের নির্বাহী বোর্ড সদস্য ও মীর আখতার হোসেন লিমিটেডের এমডি মীর নাসির হোসেন, এফএনসিসিআই (নেপাল) এর মহাপরিচালক গোকর্ণ রাজ অবস্থী এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হানসহ দেশের বিভিন্ন খাতের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আইসিসি বাংলাদেশের নির্বাহী সদস্য, সাবেক ডিসিসিআই সভাপতি, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, জাইকা, আইডিসিএল, আইডিএলসি, এনার্জিপ্যাক, লঙ্কাবাংলা, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, কোরিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার, জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।