বাসস
  ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৫৩
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:০৫

বরিশালের প্রাচীন ঐতিহ্য মিয়াবাড়ি মসজিদ

সুপ্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অনিন্দ্য সুন্দর মিয়াবাড়ি মসজিদ। ছবি : বাসস

।। মোফাজ্জেল হোসাইন।।

বরিশাল, ১ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার সদর উপজেলায় ১নং রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের রায়পাশা গ্রামে অবস্থিত সুপ্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অনিন্দ্য সুন্দর মিয়াবাড়ি মসজিদ। এটি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত বলে মনে করা হয়। বরিশালের হাতেম আলী কলেজের চৌমাথা থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ মসজিদটি।

জানাগেছে, কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদটি মুঘল আমলে নির্মিত বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মসজিদ। দ্বিতল বিশিষ্ট মসজিদটি দেখতে অনেক সুন্দর ও কারুকার্যমণ্ডিত। মসজিদের নিচে রয়েছে ছয়টি দরজাবিশিষ্ট আবাসন ব্যবস্থা। 

সেখানে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার ছাত্রদের জন্য রয়েছে আবাসন ব্যবস্থা। দোতলাকে কেন্দ্র করেই করা চমৎকার নকশার কাজে মূল মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। 

মূল মসজিদের রয়েছে তিনটি দরজা। মসজিদের চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে আটটি বড় মিনার। বড় মিনারগুলোর মাঝে রয়েছে ছোট ছোট ১২টি মিনার। সুন্দর কারুকার্যময় নকশা দ্বারা ছোট মিনারগুলোর মাঝের স্থানকে অলঙ্কৃত করা হয়েছে। মসজিদের মাঝখানে নির্মিত বড় তিনটি গম্বুজের মধ্যের গম্বুজটি আবার সবচেয়ে বড়। যার ভিতরের অংশেও রয়েছে কারুকার্যময় সুন্দর নকশার সমাহার। 

মসজিদটি নির্মাণের ইতিহাস সম্পর্কে জনশ্রুতি রয়েছে, ‘মিয়াবাড়ি মসজিদটি বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের ব্রিটিশ আমলের সূচনালগ্নে নির্মিত একটি মসজিদ। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা হায়াত মাহমুদ এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। বিদ্রোহের কারণে ইংরেজ শাসকরা তাকে প্রিন্স অব ওয়েলস দ্বীপে নির্বাসিত করেন। ইংরেজরা তার উমেদপুরের জমিদারিও কেড়ে নেয়। দীর্ঘ ১৬ বছর নির্বাসনে থাকার পর দেশে ফিরে তিনি দুটি দীঘি এবং দোতলা একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। 

মিয়াবাড়ি মসজিদের পূর্ব পাশে কয়েক একর নিয়ে বিশাল একটি দীঘিও রয়েছে, যা মসজিদের সৌন্দর্যকে আরো নয়নাভিরাম করে তুলেছে। মসজিদটির দোতলায় ওঠার জন্য রয়েছে আলীশান সিঁড়ি। সিঁড়ির গোড়ায় হেলান দিয়ে বসার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। মসজিদটি প্রাচীনকালে ইসলামপ্রিয় মানুষের রুচি ও স্থাপত্য শিল্পের সৌন্দর্য বর্ধনে জমিদারি মানসিকতার পরিচয় বহন করে। 

রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল আমিন বলেন, মসজিদটি আমাদের ইউনিয়নের ঐতিহ্য। মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভীড় করেন। এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। 

স্থানীয় বশির মিয়া বলেন, এই মসজিদে আমরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। এ মসজিদে বিলাসিতা না থাকলেও নির্মল পরিবেশে নামাজ আদায় করা যায়। দুর দুরন্ত থেকে অনেকে এ মসজিদ দেখতে আসেন।

আনোয়ার হোসেন নামে অপর এক মুসল্লি বলেন, মসজিদটি বেশ পুরনো হলেও এটি অনেক ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। নানা কারুকাজ সকলকে মুগ্ধ করে। আমাদের মেইন সড়ক থেকে মসজিদে প্রবেশের রাস্তাটি উন্নত হলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আরো মানুষ এখনে আসতে পারতো। তাই মসজিদ, মাদরাসা সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষের কাছে বিশেষ আবেদন জনসাধারনের সুবিধার্থে রাস্তাটি সংস্কারের।

স্থানীয় রহমান মাঝি বলেন, আমরা ছোট বেলা থেকেই মসজিদটি দেখছি। এখানে একটি মাদরাসাও আছে। এলাকার ছোট বড় সবাই এখানে নামাজ আদায় করেন।

রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব নুরুল আমিন বলেন, মসজিদটি আমাদের ইউনিয়নের ঐতিহ্য। মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভীড় করেন। এখানে নামাজ আদায় করেন।