বাসস
  ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৪

২০২৬ বিশ্বকাপে ফেবারিট দলগুলোর অবস্থান

ঢাকা, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আগামীকাল ওয়াশিংটনে ফিফা ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমবারের মত বর্ধিত কলেবরের এই আসরে ৪৮টি দল অংশ নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে যৌথভাবে আয়োজিত আসন্ন এই বিশ্বকাপের ড্রয়ের ফর্মেটে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রন সংস্থা ফিফা।

২০২৬ বিশ্বকাপে অংশ নেয়া শীর্ষ র‌্যাঙ্কধারী দলগুলোর অবস্থান :

স্পেন (বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং ১) :

২০২৪ সালে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপে জয়ের পর এখনো পর্যন্ত কোন ম্যাচে পরাজিত হয়নি স্পেন। লুইস ডি লা ফুয়েন্তের দল বাছাইপর্বেও ছিল দুর্দান্ত। টিনএজার লামিন ইয়ামালের ফর্ম স্পেনকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে। মধ্যমাঠেও বেশ কয়েকজন তারকার উপস্থিতিতে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই বিশ্বকাপে খেলতে নামবে ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। ২০২৪ ব্যালন ডি’অর বিজয়ী রড্রি, ফাবিয়ান রুইজ ও মার্টিন জুবিমেন্ডির সাথে ২০২৫ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে ১০ ম্যাচে আট গোল করা আর্সেনালের মিকেল মেরিনোকে নিয়ে দারুন আশাবাদী স্পেন। ২০১০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা বাছাইপর্বে ৬ ম্যাচে ২১ গোল করেছে। এ বছর শুধুমাত্র নেশন্স লিগের ফাইনালে জুনে পর্তুগালের কাছে পেনাল্টিতে পরাজিত হয়েছে স্পেন।

আর্জেন্টিনা (২) :

২০২২ কাতার বিশ্বকাপে জয়ী লিওনেল স্কালোনির আর্জেন্টিনা এবারও শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন নিয়েই মাঠে নামতে যাচ্ছে। এনিয়ে তৃতীয়বার বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে আলবেসেলেস্তারা। কাতার বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে লিওনেল মেসির ফর্ম ও ফিটনেস এবারও ৩৯ বছর বয়সে বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কাতো রয়েছেই। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সিতে মেসি সবসময়ই নিজের শতভাগ দিয়েই খেলে থাকে। 

বিশ্বকাপের পর গত বছর জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার শিরোপাও ঘরে তুলেছে আর্জেন্টিনা। দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইপর্বে সহজেই টেবিলের শীর্ষস্থানে থেকেই মূল পর্বের টিকিট নিশ্চিত করেছে। মেসির পাশাপাশি লটারো মার্টিনেজ ও জুলিয়ান আলভারেজকে নিয়ে সাজানো আর্জেন্টিনার আক্রমনভাগ যেকোন প্রতিপক্ষের জন্যই হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

ফ্রান্স (৩) : 

দুইবার বিশ্বকাপ জয় করা লেস ব্লুসরা গত সাতটি বিশ্বকাপের দুটিতে ফাইনালে পেনাল্টিতে পরাজিত হয়েছে। গত টুর্নামেন্টে যেভাবে তারা ফাইনালের মঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছে সেই ধারাবাহিকতা দীর্ঘদিনের কোচ দিদিয়ের দেশ্যমের অধীনে এবারও বজায় রাখতে চায় । ইউরো ২০২৪’এ গোলখরায় ভোগা ফ্রান্স নিজেদের মেলে ধরতে বদ্ধপরিকর। ইউরোর সেমিফাইনালে পৌঁছালেও স্ট্রাইকারদের ফর্মহীনতা ফ্রান্সকে বেশ ভুগিয়েছে। অধিনায়ক কিলিয়ান এমবাপ্পের সাথে ব্যালন ডি’অর জয়ী ওসমানে ডেম্বেলে ও বায়ার্ন মিউনিখের মাইকেল ওলিসের কাছ থেকে সর্বোচ্চটাই আশা করছেন দেশ্যম। 

ইংল্যান্ড (৪) :

গ্যারেথ সাউথগেটের অধীনে বেশ কয়েকটি বড় টুর্ণামেন্টের শিরোপার কাছাকাছি গিয়ে ব্যর্থ হওয়া ইংল্যান্ড এবার আর কোন ভুল করতে চায়না। গত দুই ইউরোর ফাইনাল ও ২০১৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, ২০২২’র কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় এসবই এখন দু:স্মৃতি। নতুন কোচ থমাস টাচেল দলকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপের শিরোপার পর বড় কোন শিরোপা না পাওয়া ইংল্যান্ড এবার অপেক্ষার পালা শেষ করতে চায়। 

বাছাইপর্বে আট ম্যাচের আটটিতেই কোন গোল হজম না করে ইউরোপের প্রথম দল হিসেবে চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পেয়েছিল ইংল্যান্ড। টাচেলের সাথে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তারকা জুড বেলিংহামের সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা ছাড়াও দলের অন্য খেলোয়াড়রাও দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। বিশেষ করে অধিনায়ক হ্যারি কেনের সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়ে ইংল্যান্ড আত্মবিশ্বাসী হতেই পারে। এবারের মৌসুমে নভেম্বর পর্যন্ত বায়ার্ন ও ইংল্যান্ডের হয়ে ২৫ ম্যাচে ৩২ বছর বয়সী কেন ইতোমধ্যেই ২৯ গোল করে ফেলেছেন।

ব্রাজিল (৫) :

এখনো বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সাফল্যকে কোন দল ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। আর তাই বিশ্বকাপ আসলেই ব্রাজিল হয়ে উঠে সুস্পষ্ট ফেবারিট। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তার উপর কোচ হিসেবে কার্লো আনচেলত্তির দূরদর্শিতার উপর পুরো বিশ্বের চোখ তো থাকবেই। প্রথমবারের মত বিদেশী কোন কোচের অধীনে বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে সেলেসাওরা। ব্রাজিলের সাম্প্রতিক কিছুটা ফর্মের ঘাটতি আনচেলত্তির হাত ধরেই কেটে যাবে বলে সকলের বিশ্বাস। ২০২২ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপের পঞ্চম শিরোপা পাওয়া ব্রাজিল গত কয়েক আসর ধরেই হেক্সা মিশনের লক্ষ্যে মাঠে নামছে। চারবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। 

২০১৪ সালে ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে জার্মানীর কাছে ৭-১ গোলের পরাজয় এখনো ভুলতে পারেনি ব্রাজিলিয়ানরা। প্রায় এক দশক ধরে নেইমারের উপর একক নির্ভরশীলতা এবার কিছুটা হলেও কমে গেছে। ইনজুরিতে প্রায়শই মাঠের বাইরে থাকা নেইমারের শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। আর এই সুযোগে ভিনিসিয়াস জুনিয়র হয়ে উঠেছেন দলের মূল কান্ডারি। গত বছর অল্পের জন্য ব্যালন ডি’অর পাওয়া হয়নি। 

ভিনি ছাড়াও চেলসির টিনএজার এস্তেভাও নিজেকে বিশ্বমঞ্চে প্রমানের জন্য মুখিয়ে আছে। বাছাইপর্বে ১৮ ম্যাচের ৬টিতে পরাজিত ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকান টেবিলের পঞ্চম স্থানে থেকে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে। 

পর্তুগাল (৬) :

সেমিফাইনালের বাঁধা এখন পর্যন্ত পেরুতে না পারা পর্তুগাল ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর জন্য হলেও একবার বিশ্ব শিরোপা হাতে নিতে চায়। সাম্প্রতীক ফর্ম বিচারে পর্তুগাল নিজেদের অন্যতম ফেবারিট দল হিসেবে প্রমান করেছে। ৪১ বছর বয়সেও রোনাল্ডো ফর্ম পর্তুগালের আক্রমনভাগের মূল ভরসা। এছাড়া মধ্যমাঠে ভিটিনহা, হুয়াও নেভেস, বার্নান্ডো সিলভা, ব্রুনো ফার্নান্দেসরাতো রয়েছেনই। নেশন্স লিগের শিরোপা পর্তুগালকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে। 

জার্মানী (৯) :

বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে নেদারল্যান্ড ও বেলজিয়ামের পরে ৯ নম্বরে অবস্থান করা জুলিয়ান নাগলেসম্যানের জার্মানী ২০১৪ সালের পর বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ে কোন কমতি রাখতে চায়না। আগের দুই আসর ২০১৮ ও ২০২২ সালে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় ও ২০২৪ সালে স্বাগতিক হয়েও কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায়ের দু:স্মৃতি ভুলে এবার আরো সামনে এগিয়ে যেতে চায় জার্মানরা। 

জসুয়া কিমিচ, ফ্লোরিয়ান রিটজের সাথে উঠতি তারকা নিক ওল্টেমেডের ফর্ম প্রতিপক্ষ দলগুলোকে কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে।