বাসস
  ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:০৮
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:২০

ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল

ছবি : বাসস

ইব্রাহিম খলিল মামুন

কক্সবাজার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম ঘটছে। সৈকত ও হোটেলগুলোতে এখন দর্শনার্থীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো।

রোববার লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের বালুকাবেলায় উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে সৈকতের কোথাও খালি জায়গা ছিল না। পর্যটকদের কেউ সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করছেন, কেউ বালুচরে সময় কাটাচ্ছেন, আবার কেউ শীতের মনোরম আবহাওয়ায় আনন্দে মেতে উঠেছেন। ফলে পুরো সৈকত এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশ।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা এই চাঙা পরিবেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ঢাকার বাসিন্দা দিলরুবা হায়দার বলেন, ভিড় কক্সবাজারের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভিড় থাকলে সমুদ্র সৈকত আরও উপভোগ্য লাগে। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত হওয়ায় সবাই একসঙ্গে উপভোগ করতে পারে।’

পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা আরেক পর্যটক আলিমুর রহমান বলেন, শীতকালে কক্সবাজার আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে তিন দিনের জন্য এসেছি। এই সমুদ্র তীরের শহরের সৌন্দর্য সব সময়ই সতেজ অনুভূতি দেয়।’

তবে কিছু পর্যটক আবাসন ব্যয় বৃদ্ধির অভিযোগও করেছেন। গাজীপুর থেকে আসা সাজ্জাদ হোসেন অভিযোগ করেন, হোটেলগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করছে। তিনি বলেন, ‘একটি কক্ষের জন্য ৪ হাজার টাকা চাইছে, যা বেশি। প্রশাসনের বিষয়টি দেখা উচিত।’

হোটেল সূত্র জানায়, অধিকাংশ গেস্টহাউস প্রায় পূর্ণ। কলাতলীর ছয়তলা ওয়েল পার্ক গেস্টহাউসের ৪৪টি কক্ষের সবকটিই রোববার সকালে ভরা ছিল। পাশের সি পার্ক গেস্টহাউসের ৭০টি কক্ষের মধ্যে ৭০ শতাংশ আগাম বুকিং হয়ে গেছে।

হোটেল মালিকদের মতে, কক্সবাজারে বর্তমানে ৫০০টির বেশি হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্ট ও কটেজ প্রায় পূর্ণ সক্ষমতায় পরিচালিত হচ্ছে এবং ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগাম বুকিং রয়েছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বছরের শেষ দশ দিনে প্রায় পাঁচ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণ করতে পারেন।

হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ পর্যটককে থাকার ব্যবস্থা দেওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, ‘২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের ছুটি এবং এর পরের দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় পর্যটকের চাপ থাকবে। আগামী দশ দিনে অন্তত এক লাখ পর্যটক আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং অধিকাংশ কক্ষই ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে হোটেল মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে।

পর্যটন পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করেছে। কক্সবাজার অঞ্চলের ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকরা হয়রানির শিকার হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘পিক সিজনে আমরা অতিরিক্ত সতর্ক থাকি। পর্যটকেরা আমাদের হেল্পলাইন ০১৩২০১৬০০০০ নম্বরে সহায়তা চাইতে পারেন।’

তিনি জানান, কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলগুলোতে এক রাতে ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি পর্যটক থাকার সুযোগ রয়েছে এবং সব হোটেলেই সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা আছে। সাদা পোশাকের পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে এবং ৩৫টি নির্ধারিত পর্যটন জোনে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শহিদুল আলম বলেন, কক্সবাজার সারা বছরই পর্যটকদের আকর্ষণ করে, বিশেষ করে ৩১ ডিসেম্বরের মতো বিশেষ সময়ে। তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে একাধিক সমন্বয় সভার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ৩১ ডিসেম্বরের রাতে সৈকতে কোনো উন্মুক্ত কনসার্ট বা আতশবাজি প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে কয়েকটি তারকা হোটেল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পেয়েছে।

নববর্ষ উদ্‌যাপন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও হোটেল মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছে।