শিরোনাম

মো. আয়নাল হক
রাজশাহী, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে বরেন্দ্রসহ এ অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান পানি সংকট মোকাবিলায় ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অঞ্চলটিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে, মূলত কৃষি সেচের জন্য নির্বিচারে পানি উত্তোলনের কারণে। গত ২০ বছরে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন ও কৃষিজমিতে কীটনাশকের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আজ বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ২৫টি উপজেলার ৪ হাজার ৯১১টি গ্রামকে পানি-সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে।
জাতীয় পানি সম্পদ কাউন্সিলের (এনডব্লিউআরসি) ১৮তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ অঞ্চলকে আগামী ১০ বছরের জন্য পানি-সংকটাপন্ন ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়কালে পানীয় জল ছাড়া অন্য কোনো কাজে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গেজেট অনুযায়ী, নিষিদ্ধ অঞ্চলে সেচ ও শিল্পকারখানার জন্য আর কোনো ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা যাবে না।
প্রফেসর সারওয়ার জাহান জানান, পানি সংকট মোকাবিলায় ভূ-উপরিস্থ পানি সম্পদ বাড়াতে হবে।
পদ্মা নদীর পানি বরেন্দ্র এলাকায় এনে সেচে ব্যবহার করা জরুরি। একই সঙ্গে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও আহরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, সরকারি পুকুর, খাল, বিল ও জলাভূমি ইজারা দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং কৃষি কাজে সেগুলোর পানি উন্মুক্ত রাখতে হবে। পাশাপাশি কম পানি-নির্ভরশীল ফসল চাষকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করতে হবে।
উন্নয়নকর্মী জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, বরেন্দ্র এলাকায় প্রায় ১০ হাজার পুকুর, ২০০ খাল এবং আরও ১০টি বড় জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার বিশাল বিল ভাতিয়া জলাভূমি রয়েছে, যার আয়তন প্রায় ৬ হাজার ৩৮৮ একর।
তিনি বলেন, বিল ভাতিয়া পুনঃখনন করলে সারা বছর ধরে হাজার হাজার হেক্টর জমি সেচ দেওয়া সম্ভব হবে। একইভাবে গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি জলাশয় রয়েছে। এটিকে পুনঃখনন করলে প্রায় ২৫ হাজার কৃষকের ১০ হাজার হেক্টর জমি পৃষ্ঠস্থ পানি দিয়ে সেচ দেওয়া যাবে।
এছাড়া দুই কিলোমিটার দীর্ঘ চৌডালা-বোয়ালিয়া খাল বহুদিন ধরে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। এটি সংস্কার করা গেলে ১৫০ হেক্টর জমিতে সেচের আওতায় আনা সম্ভব।
তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি-নির্ভর সেচ ব্যবস্থাকে পৃষ্ঠস্থ পানি-নির্ভর সেচে রূপান্তর করা গেলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ অনেকটা কমানো সম্ভব হবে।
জাহাঙ্গীর খান আরও বলেন, ক্রমশ কমে আসা পানি সম্পদ স্থানীয় দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। তবে বৃষ্টির পানি আহরণ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করলে মানুষের জীবনযাত্রা ও জীবিকা অনেকটা সহজ হবে।
তিনি মনে করেন, এখন সময় এসেছে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও প্রযুক্তি সরবরাহ করার, যাতে তারা বৃষ্টির পানি আহরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।
প্রচলিতভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি ব্যবহারের উদ্যোগগুলো ভূগর্ভস্থ পানির ক্ষয় রোধে নেওয়া হয়, যাতে গম ও ডালসহ বিভিন্ন ফসলের সেচ, গৃহস্থালি পানি সরবরাহ, জীবিকা উন্নয়ন এবং জলবায়ু সহনশীলতা বাড়ানো যায়।
জাহাঙ্গীর খান বলেন, মূল উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে বৃহৎ পরিসরে পুকুর পুনঃখনন, খাল সংস্কার এবং পানি-সাশ্রয়ী কৃষি প্রচার, যার লক্ষ্য ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পৃষ্ঠস্থ পানির উৎসে স্থানান্তর করা।