শিরোনাম

ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দেশব্যাপী বায়ুদূষণ কমানো এবং পরিবেশ বিষয়ক বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে সরকার ব্যাপক অভিযান শুরু হয়েছে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, যথাযথ লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া কোনো নতুন ইটভাটার অনুমোদন দেওয়া হবে না।
অভিযানের অংশ হিসেবে ৩ হাজার ৪৯১টি অবৈধ বা লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চলে অবৈধভাবে নির্মিত সব ভাটা সরিয়ে নেওয়া হবে।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা পরিবেশ অধিদপ্তরেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দেন এবং বলেন, বাস্তবায়ন ব্যবস্থা যেন প্রতীকী না হয়ে ধারাবাহিক হয়।
২০২৫ সাল জুড়ে কর্তৃপক্ষ অভিযান জোরদার করেছে। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত পরিচালিত ১ হাজার ১৯১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এসব অভিযানে ৪৮৩টি অবৈধ চিমনি ভেঙে ফেলা হয়েছে, ২১৬টি ভাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ১৩২ স্থানে কাঁচা ইট ধ্বংস করা হয়েছে এবং ৯১টি শিল্প ইউনিটের ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
গত ৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী পরিচালিত এক অভিযানে ১২টি ভাটা বন্ধ করা হয় এবং মোট ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
সাভারে গত নভেম্বরে একাধিক অভিযানে বেশ কয়েকটি অবৈধ ইটভাটা শনাক্ত করা হয়; কর্মকর্তারা চিমনি ভেঙে দেন, ইট-কাঠামো ভেঙে ফেলেন এবং জরিমানা করেন, যার মধ্যে একজন ভাটা-মালিককে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে আনুমানিক ৮ হাজার ৫০০টি ইটভাটা রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৪ হাজারটি অনুমোদন ছাড়াই চলছে। কিছু জেলায় অবৈধ ইটভাটার সংখ্যাই বেশি। যেমন, কুষ্টিয়ায় ২১৩টি ইটভাটার মধ্যে মাত্র ১৭টির লাইসেন্স রয়েছে।
অননুমোদিত অনেক ভাটা কাঠ বা উচ্চ সালফারযুক্ত কয়লা পোড়ায়, যা ভূমি, বন ও বায়ুমণ্ডলে মারাত্মক ক্ষতি করছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, নিয়ন্ত্রণহীন দূষণ ইতোমধ্যেই গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমিয়ে দিচ্ছে।
সংবেদনশীল চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চলে অবৈধ পাহাড় কাটাসহ পরিবেশ ধ্বংসের দায়ে সম্প্রতি হাইকোর্ট ৫৪ জন ভাটা-মালিককে জরিমানা করেছে। চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে অঞ্চলটির সব অবৈধ ইটভাটা সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ।
তবে বারবার অভিযান চালানো সত্ত্বেও অনেক ভাটা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়। বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৪ সালে বন্ধ হওয়া ভাটার প্রায় ৭৫ শতাংশ কয়েক দিনের মধ্যেই আবার চালু হয়েছে।
পরিবেশবাদী বলেন, টেকসই অগ্রগতি অর্জনে সুরক্ষা চক্র ভেঙে ফেলা, ধারাবাহিক নজরদারি, স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণসহ জ্বালানি-সাশ্রয়ী ভাটা ও ব্লক ইট উৎপাদনের মতো পরিচ্ছন্ন বিকল্প প্রচারের প্রয়োজন।
সর্বশেষ নীতিগত ঘোষণার মাধ্যমে সরকার জোরালো বার্তা দিয়েছে, অবৈধ ইটভাটা আর রাখা হবে না এবং বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নজরদারি ও আইন প্রয়োগই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।