বাসস
  ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:২০

ফ্যাসিবাদীরা বিদায় নিয়েছে, ফ্যাসিবাদ এখনো বিদায় নেয়নি : জামায়াত আমির

পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াত নেতৃত্বাধীন আট দলের মহাসমাবেশে জামায়াতে আমির।  ছবি: বাসস

চট্টগ্রাম, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদীরা বিদায় নিয়েছে, ফ্যাসিবাদ এখনো বিদায় নেয়নি। কেউ যদি তাদের মত আচরণের চেষ্টা করে, আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, ফ্যাসিবাদ কালো না লাল, কোনো ফ্যাসিবাদকে আর বাংলার জমিনে বরদাশত করা হবে না।  

তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো বিশেষ দলের বিজয় চাচ্ছি না, আট দলের বিজয়ও চাচ্ছি না। আমরা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিজয় চাই। সেই আকাঙ্ক্ষার বিজয় হবে কোরআনের আইনের মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ। গ্রাম থেকে বিজয়ের বাঁশি বাজানো হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে কোরআনের বাংলাদেশ।

আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘী ময়দানে পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াত ইসলামীর নেতৃত্বাধীন আট দলের মহাসমাবেশে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

সমাবেশে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিশের আমির মাওলানা মামুনুল হকসহ আট দলের শীর্ষ নেতারা।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন, জাতীয় সংসদের উভয়কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু, জাতীয় নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত, আওয়ামী লীগের গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান এবং আওয়ামী লীগের সব অপকর্মের সহযোগী জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
 
আট দলের মধ্যে আছে- জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত মানুষ স্বস্তিতে কথা বলতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। বাংলাদেশের মানুষ নির্যাতন, অবিচারের শিকার হয়ে কোথাও সামান্যটুকু বিচার পায়নি। বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ভেসে গিয়েছিল। দেশের টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করা হয়েছিল। এক নয়, দুই নয় ২৮ লাখ কোটি টাকা। 

তিনি বলেন, ‘তারা রাস্তাঘাট ও দালান তৈরি করেছিল, রডের বদলে বাঁশ দিয়ে। একবার একটা মেয়েকে বলতে শুনলাম, আজ যদি কবি বেঁচে থাকতেন তিনি বলতেন, বাঁশ বাগানের মাথার ওপর ছাদ উঠেছে ওই, ছাদের জায়গায় ছাদ তো আছে বাঁশগুলো সব কই। ফ্যাসিবাদীরা আমাদের উন্নয়নের গল্প শোনাতেন। বাংলাদেশ এখন সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ এখন কানাডা। হ্যাঁ বাংলাদেশ কানাডা হয়েছে, তাদের জন্য।’

নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, ‘নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। সরকারকে এখনই নির্বাচনের জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভাবছিলাম এবার বৈষম্য দূর হবে, চাঁদামুক্ত দেশ গড়ব। কিন্তু ২০২৪- এর পরও চাঁদা বন্ধ হয়নি। নিরাপত্তা নেই, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছে না। এই দেশ আমরা চাইনি। সামনে আরও একটি আন্দোলন হবে, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে। আগামীতে ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে চাই। ইসলামী হুকুমত হলে কোনো অন্যায়- বৈষম্য থাকবে না। কেউ খাবে, কেউ খাবে না- এ রকম হবে না। দেশের একটি টাকাও বিদেশে পাচার হবে না।’

বাংলাদেশে কোরআনের অর্থ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নিজেদের অধিকার ও মালিকানা কায়েম করতে চান উল্লেখ করে বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিশের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আমাদের অধিকার চাই, মালিকানা কায়েম করতে চাই। গরিব মেহনতী মানুষকে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই।’

সোনার বাংলাদেশ দেখা শেষ, ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখা শেষ- এবার আল কোরআনের বাংলাদেশ দেখতে চাই, ইসলামের বাংলাদেশ দেখতে চাই। আগামী গণভোটে হ্যাঁ ভোটকে জয় করার আহ্বান জানান তিনি।

নগর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যক্ষ নুরুল আমিনের সঞ্চলনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন নেজামে ইসলাম পার্টির আমির সরওয়ার কামাল আজিজী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, খেলাফত আন্দোলনের আমির হাবীবুল্লাহ মিয়াজী এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম চান প্রমুখ।