শিরোনাম

—কালাম আজাদ—
বগুড়া, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): উত্তরের সবচেয়ে বড় মোকাম বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থান হাট এখন আগাম শীতকালীন সবজিতে সরগরম। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনা।
সবজিতে ভরপুর থাকলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিটি পণ্যের দাম বাজার অনুযায়ী বেশি। তবে কৃষকদের ভাষ্য উল্টো। তারা জানান, চাহিদার তুলনায় তারা কম দাম পাচ্ছেন। এরপরও সবজি বিক্রি করে দাম পেয়ে তারা খুশি।
মহাস্থানহাট ঘুরে দেখা যায়, উত্তবঙ্গের মহাস্থানহাটে বগুড়ার প্রায় সব উপজেলার সবজি ওঠে। এছাড়া পাশের গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, নওগাঁর উৎপাদিত সবজি আনা হয় এ হাটে। ভোরের আলো ফোটার আগেই বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা সবজি নিয়ে চলে আসেন এই হাটে।
হাটে আগাম শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলাসহ বিভিন্ন সবজিতে সয়লাব পুরো বাজার। মানভেদে প্রতি মণ ফুলকপি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়। খুচরা বাজারে এই ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে।
প্রকারভেদে বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২ থেকে ১৮ টাকায়। প্রতি মণ বেগুন ১২০০ টাকা, মুলা ৭০০-৮০০ টাকা। প্রতি কেজি শিম ৬০-৬৫ টাকা এবং টমেটো ৩০-৩৫ টাকা কেজি, করলা খুচরা ৬৫-৭০ টাকা ও নতুন পেঁয়াজ ৪০-৫০ টাকা কেজি।
হাটে নতুন আলুর কদর সবচেয়ে বেশি। প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৩৪০০ টাকায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়।
কৃষককরা বলছেন, এবারের মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু শীতের শুরুতে বৃষ্টির কারণে সবজির জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ কারণে দামও বেড়ে যায়। তবে গত দু সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম অনেক কমে এসেছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের শুরুতে আগাম শীতকালীন সবজিতে সয়লাব থাকে। তাই দাম এখন অনেক সহনশীল।
শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা এলাকার কৃষক মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ৩ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছিলাম। প্রথম দিকে প্রতি মণ বিক্রি করলাম ২০০০ টাকা। এখন দাম পাচ্ছি ৭০০-৮০০ টাকা মণ।
একই উপজেলার কিচক এলাকা থেকে আব্দুস সাত্তার জানান, বাঁধাকপি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকা কেজি। ছোটগুলো ৮-১০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। এগুলো আগে বিক্রি করেছি প্রতি পিস ২৮-৩০ টাকায়।
সদরের লাহিরীপাড়া গ্রামের আবু তালেব জানান, মুলা ১৪০০-১৫০০ টাকা মণ ছিল। এখন মণ প্রতি দাম পাচ্ছি ৭০০-৮০০ টাকা।
মহাস্থান হাট থেকে সবজি কিনে চট্টগ্রামে সরবরাহ করেন মোস্তফা কামাল। তিনি জানান, হাটে মাল আছে অনেক কিন্তু দামে পোষাচ্ছে না।
আরেক পাইকারী ব্যবসায়ী মো. হাসিব জানান, বাজারে সবজির সরবরাহ অনেক। কিন্তু এখানকার দাম ঢাকার দামের চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে। এ জন্য সবজি কিনে লাভ করতে পারছেন না।
এই পাইকারী বলেন, আগে একাই ১৫০-২০০ মণ সবজি কিনতাম। এখন কিনছি মাত্র ৪০-৫০ মণ। শুধু আমি না, সব পাইকার মাল কম কিনছে। কারণ মাল কিনে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার খরচ আছে। এসব খরচ দিয়ে ঢাকায় যা রেট, তাতে আমরা বিক্রি করতে পারি না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে চাষ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টরে। কৃষি কর্মকর্তাদের হিসাব মতে, হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ১৭ টন।