বাসস
  ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:৪৯

দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতে কক্সবাজার সৈকতে ‘প্লাস্টিকের দৈত্য’

ছবি: বাসস

কক্সবাজার, ৩ ডিসেম্বর,২০২৫ (বাসস): সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে কক্সবাজার সৈকতে তৈরি করা হয়েছে ভয়ংকর এক প্লাস্টিকের দৈত্য।

জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পরিত্যক্ত সামুদ্রিক প্লাস্টিক দিয়ে একদল স্বেচ্ছাসেবী এই দানব তৈরি করেছেন। 

সৈকতের সুগন্ধা সীগাল পয়েন্টে প্রদর্শন করা হচ্ছে ওসান প্লাস্টিক বর্জ্যে তৈরি এ ভাস্কর্যের। পাশাপাশি তিন মাসব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় এই ভাস্কর্যয়ের উদ্বোধন করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান। আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহীদুল আলম ও বিদ্যানন্দের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন প্রমুখ।

সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সীগাল পয়েন্টের বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে আছে প্লাস্টিকে তৈরি ভয়ংকর এক দানব। প্রতীকী হলেও এর হিংস্র থাবায় প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে মানবদেহ, প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য।

প্রথম দর্শনে পর্যটকদের মনে ভয় ধরিয়ে দিলেও কাছে যেতেই তা কেটে যাবে। তারা জানতে পারবেন প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতির মাত্রা।

আয়োজকরা জানান, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই সমাগম ঘটে লাখো পর্যটকের। তাদের অনেকে সৈকতের বালিয়াড়ি ও সাগরের পানিতে প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীর বর্জ্য ফেলে। এতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ এবং হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও মানবজীবন। দূষণ রোধে ও সচেতনতা সৃষ্টিতে ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, জেলা প্রশাসন সবসময়ই এমন উদ্যোগের সঙ্গে থাকবে। আশা করছি এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষ প্লাস্টিক ব্যবহারে আরও সতর্ক হবে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্লাস্টিক দূষনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সরকারের পলিসির সাথে সমন্বয় করে আমরা সারাদেশ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে ৫শ’ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করেছি। 

তিনি আরও জানান, দেশব্যাপী এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় ৬ মাসব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে কাজ করব। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর ও শিল্পী আবীর কর্মকার জানান, প্লাস্টিকের দানবটি তৈরি করেছেন বিভাগের একদল শিল্পী। 

ভাস্কর্য শিল্পীদের দাবি, এটি ওসান প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘প্লাস্টিক দৈত্য’। এটি তৈরি করতে প্রায় ৬ মেট্রিক টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়েছে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক জানান, প্রায় ৪ মাস ধরে কক্সবাজার, ইনানী ও টেকনাফের সমুদ্র সৈকত থেকে অন্তত ৮০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব বর্জ্যর একটা অংশ দিয়ে এই ‘প্লাস্টিক দানব’ নির্মাণ করা হয়েছে। এটি পুরো পর্যটন মৌসুমে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। 

এছাড়া প্লাস্টিক দূষণবিরোধী সচেতনতামূলক পথনাটক ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।