বাসস
  ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:৫৭

অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ, গ্রেফতার ৩

ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কর্মকর্তাকে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি দেওয়া ও আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি)।

গ্রেফতাররা হলেন—সনজ সাহা ওরফে উজ্জ্বল চৌধুরী (৫৬), মো. মোশারফ হোসেন (৬৪) ও মো. শাহজাহান (৪৬)। 

আজ বুধবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ঢাকার উত্তরা এলাকায় ভুয়া অফিস স্থাপন করে উচ্চ পদ ও আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি দেওয়ার পাশাপাশি ঘড়ি আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র। এই অভিযোগে মঙ্গলবার ঢাকার তাঁতিবাজার মোড় সংলগ্ন মালিটোলা পার্ক এলাকা হতে চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার।

ভুক্তভোগী মামলার বাদী জানান, তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর প্রতারক চক্রের সদস্য মো. আব্দুর রশিদ তাকে উচ্চ পদে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে উত্তরা এলাকার একটি অফিসে ডেকে নেন। সেখানে বিসিজে (বাংলাদেশ চায়না জাপান) নামে কথিত একটি গ্রুপে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার মাসিক বেতনে পরিচালক পদে নিয়োগের জন্য বাদীর সঙ্গে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী এই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাকে লাভজনক একটি ব্যবসার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে মো. আব্দুর রাজ্জাক নামের এক ব্যক্তি নিজেকে ভারতীয় একটি কোম্পানির প্রতিনিধি এবং আমিনুল ইসলাম নামে অপর ব্যক্তি নিজেকে কোম্পানিটির বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক পরিচয় দিয়ে ঘড়ি কেনাবেচার ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ করেন। প্রকৃতপক্ষে এভাবে ভুক্তভোগী ব্যক্তি একটি কল্পিত ব্যবসার ফাঁদে পড়েন। এভাবে চাকরির পাশাপাশি ভারতীয় কোম্পানির কাছে ঘড়ি সরবরাহের মাধ্যমে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনের সুযোগ দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হয়। ব্যবসায় বিনিয়োগ ও মুনাফা ভাগাভাগিতে তাদের মধ্যে একটি মৌখিক চুক্তিও হয়।   

গ্রেফতাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তারা বাদীর কাছ থেকে ধাপে ধাপে মোট ৪৫ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন। ঘড়ি কেনার পর ভারতীয় কোম্পানিটির কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা লাভ দেওয়ার কথা বলে তারা এই প্রতারণা করেন মর্মে স্বীকারও করেন।

কিন্তু অভিযুক্তরা অর্থ গ্রহণের পর ভুক্তভোগী বাদীকে জানান, ঘড়ি সরবরাহ সম্ভব হয়নি এবং  পক্ষান্তরে আরো ১০ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য বাদীকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন—তিনি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের শিকার হয়েছেন। এরপর  ভুক্তভোগী তুরাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। 

মামলাটির তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ ও অন্যান্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, প্রতারক চক্রটি অবসরপ্রাপ্ত বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের টার্গেট করে চাকরি দেওয়ার নাম করে ও ব্যবসায়িক প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে। এই চক্রের সদস্যরা প্রতিটি অপরাধ সংঘটনের সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে এবং অপরাধ শেষ হয়ে গেলে সেসব ডিভাইস নষ্ট করে ফেলে।

মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম বর্তমানে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিট পরিচালনা করছে। গ্রেফতারদের আদালতে প্রেরণ ও রিমান্ডের আবেদনসহ পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।