বাসস
  ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৪৩

দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে : জোনায়েদ সাকি

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। ফাইল ছবি

ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা হলো- বাংলাদেশে একটি উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে সুযোগের সমতা তৈরি হবে, সম্পদের বণ্টনে অধিকতর ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে এবং আরও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে।

আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণসংহতি আন্দোলন (জিএসএ)-র উদ্যোগে আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে শিক্ষা সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে ‘আপনার মতামত, আমাদের ইশতেহার’ শীর্ষক উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভার শুরুতেই দলের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য সচিব আতিকুল বারী চৌধুরী শিক্ষা সংস্কার ভাবনা তুলে ধরেন।

সভায় জোনায়েদ সাকি বলেন, মানবিক জনগোষ্ঠী তৈরি করা এবং দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করা- দুটোই জরুরি এবং বর্তমান সময়ের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে তা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত শিশুর শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আনতে হলে যেমন বাজেটের প্রয়োজন আছে, তেমনি শিক্ষাব্যবস্থার নীতি-কাঠামোয়ও পরিবর্তন আনতে হবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, শিক্ষকদের বেতন, সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদাকে একটি সুনির্দিষ্ট অবস্থানে দাঁড় করাতে হবে। শিক্ষকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতন স্কেল থাকা দরকার। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো ও মর্যাদার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের মর্যাদা এবং তাদের কাজের মূল্যায়ন- এই দুটি বিষয়কে একত্রে বাজেট পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে অবকাঠামো ও তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর আধুনিক ব্যবস্থাপনা। এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিলে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব।

লেখক ও চিন্তক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, গণশিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে। তিনি বলেন, দেশের সব মানুষকে মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা গেলে উন্নয়ন কঠিন হবে না। কারণ মানুষ জানবে কী করলে কী হয়, সে কী করতে পারে এবং তার দক্ষতা কোথায় ব্যবহার করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মান খারাপ হলে মাধ্যমিক শিক্ষার মানও খারাপ হবে। আর মাধ্যমিক শিক্ষার মান খারাপ হলে উচ্চশিক্ষার মানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, যেসব দেশের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতা করতে চাই, তারা শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। তারা এখন শুধু ডিজিটালাইজেশন নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়েও কাজ করছে।

তিনি বলেন, আমাদের এমন মানুষ তৈরি করতে হবে যারা চিন্তা করতে পারে, সৃষ্টি করতে পারে এবং সৃষ্টিশীল হতে পারে। সবাইকে এম.এ. পাস করানোর প্রয়োজন নেই; বরং স্কুল-কলেজ থেকেই নির্ধারণ করতে হবে কার দক্ষতা কোন দিকে। কেউ কোনো কাজে দক্ষ মানেই সে কম মেধাবী- এই ধারণা ভুল।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে জিএসএ’র নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, গণসংহতি আন্দোলনের ইশতেহার প্রণয়নের অংশ হিসেবে এ ধরনের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত ও জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দলের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হবে।

আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন লেখক ও মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান, শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক আবুল হাসনাত কবির, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক মনযূরুল হক, লেখক ও শিক্ষক সফিক ইসলাম এবং আমাদের পাঠশালার প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন।