শিরোনাম

ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): রাজধানীতে এক নীতি-সংলাপে বিশেষজ্ঞরা রাজনৈতিক অর্থায়নে কাঠামোগত সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন, যাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পায়।
তারা উল্লেখ করেছেন, নিয়মিত দলীয় অর্থায়নই মূল কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত। এই নিয়মিত অর্থপ্রবাহই রাজনৈতিক নেটওয়ার্ক ও সংগঠনের কাঠামোকে টিকিয়ে রাখে, যা নির্বাচনী সময়ে ব্যয়ের চেয়ে দৈনন্দিন রাজনৈতিক আচরণকে বেশি প্রভাবিত করে।
আজ রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক অর্থায়ন সংস্কৃতি ও ব্যবসা সুরক্ষা: বাস্তবতা ও সমাধানের পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স (দায়রা) এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিডিজবস ডটকম-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে এম ফাহিম মাসরুর, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক উপসচিব (নির্বাচন কমিশন) জেসমিন তুলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী, শাশা ডেনিমস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা সিবগাতুল্লাহ সিবগা প্রমুখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ এম শাহান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং দায়রা’র গবেষণা সহযোগী রাগীব আনজুম একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি মোকাবিলায় ড. বদিউল আলম মজুমদার কয়েকটি মৌলিক পরিবর্তনের প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দল সংস্কার, তথ্য অধিকার (আরটিআই) অন্তর্ভুক্তি, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা এবং নির্বাচনী ক্ষেত্র পরিষ্কার করা।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক ও নির্বাচনী ক্ষেত্রগুলোকে পরিষ্কার করতে হবে এবং অসাধুদের দূরে রাখতে হবে। সাধারণ নাগরিকরা দুর্নীতিগ্রস্ত নির্বাচনী ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে এখন অনেক সচেতন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান উল্লেখ করেন, কার্যকর সংস্কারের জন্য কেবল নির্বাচন আইন পরিবর্তন নয়, বরং ক্ষমতার অন্তর্নিহিত কাঠামোকে সামগ্রিকভাবে ভেঙে ফেলা প্রয়োজন।
তিনি একটি ত্রিভুজ সিন্ডিকেট—রাজনীতি, আমলাতন্ত্র এবং ব্যবসা—কে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ওপর ধ্বংসাত্মক নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন।
তিনি বলেন, এই সিন্ডিকেট সফলভাবে রাষ্ট্র কাঠামো দখল করেছে। একটি যৌথ মূলমন্ত্রে পরিচালিত হয়ে: ক্ষমতা দখল করা, দুর্নীতি করা, দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করা এবং বিচারিক দায়মুক্তি নিশ্চিত করা।
শামা ওবায়েদ যুক্তি দেন, রাজনৈতিক অর্থায়ন ও জবাবদিহিতা-সংক্রান্ত সমস্যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। এটি কেবল বিএনপি, এনসিপি বা জামায়াতের মতো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সত্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
তিনি বিএনপির বিদ্যমান তহবিল সংগ্রহের প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সম্প্রতি এক উপস্থাপনায় সংগঠনের কঠোর আর্থিক মডেল তুলে ধরেন, যেখানে সর্বাত্মক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং তৃণমূল অবদানের ওপর নির্ভরতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, সংগঠনের মৌলিক নীতি দুটি কঠোর নিয়মের ওপর দাঁড়িয়ে আছে: ‘রসিদ ছাড়া কোনো আয় নয়’ এবং ‘ভাউচার ছাড়া কোনো ব্যয় নয়’।
এনসিপির নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ যুক্তি দেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থায়নে বর্তমান সমস্যাগুলো কেবল নৈতিক নয়, বরং কাঠামোগত ব্যর্থতা থেকে উদ্ভূত।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, কেবল ব্যক্তির পরিবর্তন করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, যদি অন্তর্নিহিত কাঠামো অপরিবর্তিত থাকে।