বাসস
  ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৪৫

উত্তরাঞ্চলে ছুটে আসছে পরিযায়ী হিমালয়ান গৃধিনী পাখি

উত্তরের জনপদে হিমালয়ান গৃধিনী শকুন। ছবি: বাসস

\ রেজাউল করিম মানিক \

রংপুর, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রতিবছর শীত এলে অসংখ্য পরিযায়ী হিমালয়ান গৃধিনী শকুন উড়ে আসে উত্তরের জনপদে। হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে তারা। হিমালয় অঞ্চলে তীব্র শীতের কারণে, নিরাপদ আশ্রয় ও খাবারের খোঁজে ছুটে আসে এসব পরিযায়ী শকুন।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা স্মৃতি সিংহ রায় বলেন, আফ্রিকা অঞ্চল থেকে বেশ কিছু শকুন ইতোমধ্যে রংপুর অঞ্চলে এসেছে। তাদের দেখা মিলছে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনায়। হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আসা এসব শকুন ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। আর এই ক্লান্ত শকুনগুলোই বিভিন্ন জায়গায় পড়ে যায়। যেখানেই এই পরিযায়ী পাখি দেখবেন, সেখান থেকে উদ্ধার করে আমাদের খবর দেবেন। গেল এক মাসে ছয়টি পরিযায়ী পাখিকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং অবমুক্ত করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছরের প্রথম ক্লান্ত হিমালয়ান শকুন উদ্ধার হয়েছে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায়। ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় বিশাল আকৃতির প্রায় ১০ কেজি ওজনের এক হিমালয়ান গৃধিনী শকুনকে উদ্ধার করেন বন্যপ্রাণী উদ্ধার কর্মী লিজেন্ড আহম্মেদ প্রান্ত। শকুনটি মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের তরফবাহাদি গ্রামের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করেন তিনি। শকুনটিকে উদ্ধারে গিয়ে কিছুটা আহত হন প্রান্ত।

পরে বন্যপ্রাণী রক্ষায় ও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এ শকুনটিকে নিয়ে আসা হয় কারমাইকেল কলেজ মাঠে। এ সময় অনেকে ছুটে আসেন বিশাল আকৃতির শকুনটিকে দেখতে।

এ সময় কথা হয় শকুনটিকে দেখতে আসা মানুষজনের সঙ্গে। শকুনটিকে দেখে ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করেন জাহিদুল নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, একসময় আকাশে অনেক শকুন দেখা যেত। এখন তা আর দেখতে পাওয়া যায় না।

শকুন দেখতে আসা আরেক ব্যক্তি রকিবুল বলেন, এর আগে এত কাছ থেকে শকুন দেখার সুযোগ হয়নি তার। এত বিশাল আকৃতির শকুন দেখে বিস্মিত তিনি।

শকুন দেখতে আসা নাজমুল বলেন, শীত আসলে অনেক অতিথি পাখির আনাগোনা বাড়ে এ অঞ্চলে। এই অতিথি পাখিগুলো দেখে ভালোই লাগে। তবে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য তৈরি হলে, আরও বাড়বে এসব পাখির আনাগোনা।

এ বিষয়ে শকুন উদ্ধারকারী প্রান্ত জানান, এ বছরের প্রথম শকুন উদ্ধার এটি। প্রতিবছর শীত মৌসুমে এ রকম ১০-১২টি হিমালয়ান গৃধিনী শকুন উদ্ধার করেন তারা। চলতি শীতে গেল এক মাসে এই অঞ্চল থেকে ছয়টি পরিযায়ী পাখি উদ্ধার করে অবমুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

বনবিভাগের তথ্য অনুয়ায়ী, রংপুর অঞ্চলে প্রতিবছর ৫০-৬০ টি হিমালয়ান শকুন উদ্ধার করে চিকিৎসা পরবর্তী অবমুক্ত করা হয়।

রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, তীব্র শীতের কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে পরিযায়ী পাখি আমাদের উত্তর অঞ্চলে আসছে। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এই অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি যাতে পাখি শিকারিরা এই পরিযায়ী পাখিকে হত্যা করতে না পারে। চলতি শীতে ইতোমধ্যে ছয়টি পাখি উদ্ধার করে অবমুক্ত করা হয়েছে।