বাসস
  ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:৩৩
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ২১:০৩

রংপুর অঞ্চলে স্থায়ীভাবে নির্মূল হয়েছে ‘মঙ্গা’ 

ছবি: কোলাজ বাসস

/মো. মামুন ইসলাম/

রংপুর, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : রংপুর অঞ্চলে বারবার ফিরে আসা স্থানীয়ভাবে ‘মঙ্গা’ নামে পরিচিত মৌসুমি বেকারত্বের সংকট দীর্ঘমেয়াদী সরকারি উদ্যোগ ও ব্যাপক দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির মাধ্যমে কার্যকরভাবে নির্মূল করা হয়েছে।

দেড় দশক আগেও এই অঞ্চলের দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষ আশ্বিন ও কার্তিক মাসে মৌসুমি দুর্দশায় নিপতিত হতেন, এখন তারা সেই সময়েও স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন।

‘নর্থবেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’-এর চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ শামসুজ্জামান বলেন, ‘এই সাফল্য এসেছে ধারাবাহিক ও বিস্তৃত কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে।’

সরকারের ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি (এসএসএনপি) এবং অন্যান্য উদ্যোগ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

এতে মূল ভূমিকা পালনকারী কর্মসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে: স্বল্প মেয়াদী আমন ধানের বিস্তৃত চাষ, টেস্ট রিলিফ, খাদ্যের বিনিময়ে কাজ, টাকার বিনিময়ে কাজ, ভিজিডি, ভিজিএফ এবং অন্যান্য খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্প এবং আরও অনেক প্রকল্প দরিদ্রদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

গৃহহীনদের পুনর্বাসন, প্রশিক্ষণ ও আয়বর্ধক কার্যক্রমে (আইজিএ) ক্ষুদ্রঋণ প্রদান, ভাতা ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কর্মসূচি দরিদ্রদের জীবিকা উন্নত করতে এবং ‘মঙ্গা’ কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছে।

ড. শামসুজ্জামান আরও বলেন, বিভিন্ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের পর ‘মঙ্গা’ শব্দটি এই অঞ্চল থেকে স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত হয়ে একটি ঐতিহাসিক শব্দ হয়ে উঠেছে। 

২০১৮ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষিবিদ ড. এম এ মজিদ বলেন, স্বল্প মেয়াদী আমন ধানের চাষ এবং ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন ‘মঙ্গা’ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

আশ্বিন ও কার্তিক মাসে স্বল্প মেয়াদী আমন ধান কাটার ফলে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যা দরিদ্রদের জীবিকা উন্নয়নে সহায়তা করেছে।

রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, এই মৌসুমে পাঁচ জেলায় ৬,২১,৫০৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে, যার মধ্যে ৬২,০০০ হেক্টরে স্বল্প মেয়াদী জাত।

এর মধ্যে প্রায় ২০,০০০ হেক্টর জমির ধান ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে, যা মৌসুমি দুর্দশার সময় দরিদ্র ও কৃষিশ্রমিকদের জন্য বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

তিনি আরও জানান, ধান কাটার পর কৃষকরা একই জমিতে আগাম জাতের আলু, সরিষা, শাকসবজি ও অন্যান্য শীতকালীন ফসল চাষ করছেন, যা আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল ফারুক বলেন, রংপুরে ৪০,০০০-এর বেশি বেকার যুবক প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এবং অনেকেই সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে আত্মনির্ভর হয়েছেন।

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক শাহিদুর রহমান সুমন জানান, তাদের প্রকল্পগুলো বহু গ্রামীণ পরিবার, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের আত্মনির্ভরশীল করেছে।

রংপুর পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মাহিদুল ইসলাম জানান, রংপুরে ৪৫,০০০ গ্রামীণ উপকারভোগী, যার মধ্যে ৩০,০০০ নারী, সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে আইজিএ-এর মাধ্যমে স্বচ্ছল হয়েছেন।

তারা পেয়েছেন ঘুর্ণায়মান ঋণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) ঋণ এবং ফলচাষ, মাছচাষ, ছাগল-ভেড়া-গরু পালন, গরু মোটাতাজাকরণ, নার্সারি ও হাঁস-মুরগি পালনের ওপর দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ।

গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাইমিন ইসলাম মারুফ বলেন, এসএসএনপি, ক্ষুদ্র উদ্যোগ, কুটির শিল্প, পশুপালন ও স্বল্প মেয়াদী আমন ধানের বিস্তৃত চাষ ‘মঙ্গা’কে স্থায়ীভাবে নির্মূল করেছে।