শিরোনাম
ঢাকা, ২১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : পুঁজিবাজারে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়ম উন্মোচিত হওয়ায় সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামসহ দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিনিয়োগ অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় অনৈতিকতার প্রমাণ পাওয়ায় শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ এএমসি’র সিইও রিয়াজ ইসলামকে পুঁজিবাজার কার্যক্রম থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কমিশনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ৯৭৮তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। এছাড়াও সভায় পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্টক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের জন্য প্রভিশন সংরক্ষণ ও নেগেটিভ ইক্যুইটি এবং আনরিয়েলাইজড লস সমন্বয়ের সময়সীমা বৃদ্ধি। এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের জন্য সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর ২০৩০ এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজের জন্য ৩১ ডিসেম্বর ২০৩২ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এছাড়া, নিট সম্পদের ঘাটতির বিধান পরিপালনে কিছুটা শিথিলতা থাকবে বলেও জানানো হয়।
৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে ভুয়া কোম্পানিতে বিপুল বিনিয়োগ:
সভায় আলোচিত অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তালিকাচ্যুত ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমহীন প্রতিষ্ঠান পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার লিমিটেড-এর ৫১ শতাংশ শেয়ার অস্বাভাবিক মূল্যে (প্রতি শেয়ার ২৮৯.৪৮ টাকা) অধিগ্রহণ করে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগের ঘটনা। এই বিনিয়োগ পরিচালনা করে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ এ্যসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড। যার অধীনে পরিচালিত ৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে প্রায় ৬৮.৬৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয় একটি লোকসানি কোম্পানিতে। যার নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ছিল নেগেটিভ ২.৭৪ টাকা এবং রিটেন আর্নিং ছিল নেগেটিভ ২.৩৫ কোটি টাকা।
পরবর্তীতে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে ‘কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড’ রাখা হয় এবং প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন ১.৬০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকা করা হয়। বিভিন্ন নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়, যেমন: প্রাইস সেনসেটিভ ইনফরমেশন (পিএসআই) প্রকাশ না করা, ইজিএম না করা, লক-ইন শর্ত পূরণ না করা। এই পুরো প্রক্রিয়ায় অনৈতিক যোগসাজশ থাকায় শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ এএমসি’র সিইও রিয়াজ ইসলামকে দোষী করা হয়।
কমিশনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা:
এই গুরুতর অনিয়মের প্রেক্ষিতে বিএসইসি নিম্নোক্ত শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে:
১) আইন লঙ্ঘনের দায়ে কোয়েন্ট বিডিসি লিমিটেডের তৎকালীন ছয় পরিচালকের প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তাঁরা হলেন: রিয়াজ ইসলাম (ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড), রেজাউর রহমান সোহাগ (গ্রিন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ড), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহসান (অব.) (এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড), মিসেস মদিনা আলী (এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড), সেজেদ কামরুল হোদা (এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান), মো. ওমর সোয়েব চৌধুরী (এনসিসিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-১)
২) বিনিয়োগ ফেরত দিতে হবে ৯০ কোটি টাকা:
এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ এএমসিকে সুদসহ ৯০ কোটি টাকা ফেরত দিতে ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। উক্ত অর্থ নির্ধারিত সময়ে ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে: এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ এএমসি’র সিইও রিয়াজ ইসলামকে ৯৮ কোটি টাকা এবং পরিচালক জর্জ এম. স্টক ওওও ও রেজাউর রহমান সোহাগকে ১ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে।
৩) এছাড়া কমিশন সভায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় জনস্বার্থে এলআর গ্লোবালের সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
৪) উল্লেখিত ৬টি ফান্ডের যথাযথ তদারকিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে (বিজিআইসি) ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
৫) এছাড়াও মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেডের তৎকালীন চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান সোহাগকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
৬) এছাড়া নিরীক্ষক হিসেবে যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় শফিক বসাক অ্যান্ড কোং এর বিষয়টি ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে (এফআরসি) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
৭) স্বার্থের সংঘাত থাকায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহসানকে (অব.) ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
৮) অনৈতিক যোগসাজশ প্রমাণিত হওয়ায় আজীবন নিষেধাজ্ঞা:
বিনিয়োগ অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় অনৈতিকতার প্রমাণ পাওয়ায় বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ এএমসি’র সিইও রিয়াজ ইসলামকে পুঁজিবাজার কার্যক্রম থেকে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
৯) শেয়ার মূল্যায়নের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং: থাইরোকেয়ার বাংলাদেশ লিমিটেডে ২৪.৯৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শেয়ার মূল্যায়নে অনিয়ম এবং মানিলন্ডারিং-এর আলামত পাওয়ায় বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এ অনিয়মে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেডের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরশাদ হোসেন এবং এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ এএমসি’র সিইও রিয়াজ ইসলামকে রিয়াজ ইসলামের যোগসাজশ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়।